শতভাগ মানুষ বিদ্যুত্ পাবে ২০২১ সালের মধ্যে-হাসিনা
বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই বিদ্যুত্ খাতের উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুত্ উত্পাদনের চলমান গতি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুত্ দিতে পারব। সব মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাব এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। বাসাবাড়িসহ সর্বত্র অহেতুক বিদ্যুত্, জ্বালানি ও গ্যাস অপচয় না করার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার সকালে বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে ‘জাতীয় বিদ্যুত্ ও জ্বালানি সপ্তাহ-২০১৬’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুত্ ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্পাদন যেমন ব্যয়বহুল তেমনি সময়সাপেক্ষ। তাই সবাইকে বিদ্যুত্ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি চাই অভিভাবক শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, আদালত-সর্বক্ষেত্রেই আপনারা সাশ্রয়ী মনোভাব নিন অর্থাত্ বিদ্যুতের সুইচটা একটু নিজেরাই অফ করেন। আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও ঘর থেকে বের হবার সময় নিজ হাতেই বিদ্যুতের সুইচটা বন্ধ করে দেই। কাজেই আমি চাই প্রত্যেকের মাঝেই এই মানসিকতাটা থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের একটু অভ্যাস খারাপ আছে। অনেকে মনে করেন, আমি বড় অফিসার। আমি আবার সুইচ অফ করবো কেন! আর্দালি-পিয়ন এসে করবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে নিজের কাজ নিজে করায় লজ্জার কিছু নেই’। গ্যাসের অপচয় রোধে সবাইকে সচেতন ও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে গ্যাসের চুলা বন্ধ করেন না। একটু মিট মিট করে জ্বালিয়ে রাখেন। এতে অপচয় যেমন ঘটে, তেমনি দুর্ঘটনাও ঘটে। আগুনে পুড়ে মানুষ মারা যান’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুত্ খাতের ক্রমাগত উন্নয়নের মাধ্যমে গত আট বছরে ৮০টি নতুন বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ৯,৮৯৩ কিলোমিটার এবং বিতরণ লাইনের পরিমাণ ৩ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার। বিদ্যুত্ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণেও আমরা ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্পাদিত বিদ্যুত্ সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্নভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিগত আট বছরে ১,৯০২ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ৯৭,০০০ কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টার ফলে দেশে মাথাপিছু বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালের ২২০ কিলোওয়াট আওয়ার থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে বর্তমানে ৪০৭ কিলোওয়াট আওয়ারে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী ও বেগবান করবে।
বর্তমানে দেশের ৭৮ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ৯,৮৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি কয়লাভিত্তিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এছাড়াও আমরা রূপপুরে নিউক্লিয়ার বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আগামী ২০২৪ সাল নাগাদ নিউক্লিয়ার বিদ্যুত্ কেন্দ্র হতে ২২০০ মেগাওয়াট উত্পাদন করা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ব্যবহূত বাণিজ্যিক জ্বালানির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা পূরণ করা হয়। সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে জ্বালানি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০০৯ সাল হতে এ পর্যন্ত নতুন তিনটি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের গড় উত্পাদন দৈনিক ১,৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট হতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দৈনিক ২,৭৪০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। ৮৫৪ কিলোমিটার নতুন গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যুত্, সার-কারখানা, শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিক খাতে বর্তমানে প্রায় ৩৪ লাখ গ্রাহকের নিকট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যত্ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধে আমাদের সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে বিদ্যুত্ উত্পাদনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক ৩১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উত্পাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের পাশাপাশি বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানিপূর্বক মজুদ বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ২টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার বিতরণ করেন। এবারের বিদ্যুত্ ও জ্বালানি সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘অদম্য বাংলাদেশ’। বিদ্যুত্ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে নেপালের জ্বালানি মন্ত্রী জনার্দন শর্মা, জাতীয় সংসদের বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম এমপি, জ্বালানি এবং খনিজ বিভাগের সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, বিদ্যুত্ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।