শতকরা ৫৭ ভাগ সংসদ সদস্য দুর্নীতিবাজ
বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা: বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের শতকরা ৫৭ ভাগ সংসদ সদস্যকে দুর্নীতিবাজ মনে করেন সেসব দেশের মানুষ। এরমধ্যে রয়েছে শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের (ডব্লিউজেপি) প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ‘ডব্লিউজেপি রুল অব ল ইনডেক্স ২০১৫’ নামে সংস্থাটি বিশ্বের মোট ১০২টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। তালিকায় নিচের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৩।
প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বিশেষজ্ঞ দল বলেছেন, এসব দেশের মানুষ ৫৭ ভাগ সংসদ সদস্যকে দুর্নীতিবাজ মনে করেন। দুর্নীতিগ্রস্তদের মধ্যে এরপর রয়েছেন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধু বাংলাদেশই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আইনের শাসনে পিছিয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে নেপালের অবস্থান ৪৮তম। এরপর রয়েছে শ্রীলঙ্কা (৫৮), ভারত (৫৯), বাংলাদেশ (৯৩), পাকিস্তান (৯৮) ও আফগানিস্তান (১০১)।
ওই সূচক অনুযায়ী, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের যে সাতটি অঞ্চলের ১০২টি দেশে ডব্লিউজেপি সমীক্ষা চালিয়েছে, তার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) এবং উত্তর আমেরিকার বেশির ভাগ দেশ আইনের শাসন সূচকে এগিয়ে আছে। প্রথম থেকে চতুর্থ অবস্থানে আছে চারটি দেশ- ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। এই সূচকে যুক্তরাজ্য ১২তম, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১৯। সবশেষ ১০২তম অবস্থানে আছে ভেনিজুয়েলা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের মানুষ যেসব সমস্যা মোকাবিলা করছে সে সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এখানে বিচারের আগে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হয়। মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। মানবসম্পদের ঘাতটি রয়েছে। বিবাদির আইনি সহায়তা পর্যাপ্ত নয়। রয়েছে দুর্নীতি। ওই রিপোর্টে পুলিশের জবাবদিহিতার প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তারাও যে আইনের সেবা করেন তার বাইরে নন।
বাংলাদেশের মানুষ সমস্যার সমাধানের জন্য ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার দ্বারস্থ হবে কি না এ সম্পর্কে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানে দুর্নীতি বেশ প্রবল। সেখানে কি প্রতিকার মিলবে সে বিষয়ে সচেতনতার অভাব আছে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের বিরুদ্ধে রয়েছে পক্ষপাতিত্বের জোরালো অভিযোগ। তবে এক্ষেত্রে কোর্ট ফি খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নয়।
প্রতিবেদনে কার্যকর আইনের শাসনের সুফল সম্পর্কে বলা হয়েছে, কার্যকর আইনের শাসন দুর্নীতি কমায়, দারিদ্র্য ও রোগব্যাধি লাঘব করে এবং জনগণকে অবিচার থেকে সুরক্ষা দেয়। নয়টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- সরকারি ক্ষমতার সংযত প্রয়োগ, দুর্নীতির অনুপস্থিতি, উš§ুক্ত সরকার, মৌলিক অধিকার, শৃংখলা ও নিরাপত্তা, প্রয়োগকারী সংস্থা, দেওয়ানি বিচার, ফৌজদারি বিচার ও অনানুষ্ঠানিক বিচার। সরকারি ক্ষমতার সংযত প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্বে ১০২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তে।
দুর্নীতির অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রয়েছে ৯৮ নম্বর অবস্থানে। উš§ুক্ত সরকারের ক্ষেত্রে ৭৩ নম্বরে। মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে ৮৮ নম্বরে। আইন শৃংখলা ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬ নম্বরে। প্রয়োগকারী সংস্থার দিক দিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে ৯৬ নম্বরে। দেওয়ানি বিচারে ৯৩তম ও ফৌজদারি বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তে।
বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এখানে মিডিয়ার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে শতকরা মাত্র ২৮ ভাগ। রাজনৈতিক দলগুলোর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে শতকরা ৩১ ভাগ। সুশীল সমাজের সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা আছে শতকরা ৩১ ভাগ। জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে শতকরা ৪০ ভাগ।