শখে বৈশাখ
সারা বছর তো জিনস, টি-শার্ট, টপ বা ফতুয়া পরা হচ্ছেই। পয়লা বৈশাখ দিনটিতে ইচ্ছা করে একটু ভিন্ন ঢঙে সাজতে; রঙিন শাড়ি, চুড়ি, ফুলেল গয়নায় বর্ণিল হয়ে উঠতে। কুর্তা বা ফতুয়া পরলে সেটাতেও থাকা চাই উৎসবের আমেজ। সাজেও থাকবে বৈশাখের বাহার।
কিছুদিন আগেও বিশেষ উপলক্ষে কিশোরীরা হয় ছোটদের পোশাকটাই একটু বড় আকারে বানিয়ে নিত, বা বড়দের পোশাকটা একটু ছোট করে পরে নিত। তবে এখন আর এর প্রয়োজন নেই বললেই চলে। ফ্যাশন হাউসগুলো শুধু কিশোরীদের জন্যই আলাদাভাবে পোশাকের সংগ্রহ নিয়ে আসছে।
কথা হলো আড়ংয়ের টিনএজ বিভাগের ফ্যাশন ডিজাইনার গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে। বললেন, ‘গড়পরতার গাঢ় শেড থেকে বের হয়ে উজ্জ্বল রংগুলোই উঠে আসতে পারে পছন্দের তালিকায়।’ তিনি আরও জানান, পয়লা বৈশাখ বলেই যে শুধু লাল-সাদা পোশাক পরতে হবে, তা-ও নয়। লালের সব শেড, হলুদ, কমলা, সবুজ, নীল, গোলাপি, এককথায় সব উজ্জ্বল রংই পরতে পারে কিশোরীরা। খেয়াল রাখা চাই পোশাকের ধাঁচে ও উপকরণে।
যাত্রার ফ্যাশন ডিজাইনার দলের পক্ষ থেকে ঊর্মিলা শুক্লা বলেন, ‘গরম পড়ছে বেশ। তাই কাপড় হওয়া চাই সুতি, ভয়েল, তাঁত বা খাদি। যে পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়, সেটাই পরা উচিত কিশোরীদের। সাধারণ পোশাকের মধ্যেও বেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেতে পারে। কামিজে একটু ঝোলা পাড়, সালোয়ারে ঢোলের আকৃতি, গলায় একটু ভিন্ন ধাঁচ, ধুতির সঙ্গে স্লিভলেস টপ বেশ মানিয়ে যাবে। আর পোশাকের সঙ্গে মানানসই ফ্যাশন অনুষঙ্গ তো চাই-ই।’
অনুষঙ্গ নিয়ে যাত্রার আরেক ডিজাইনার মাধুরী সঞ্চিতা জানালেন, রঙিন পুঁতির মালা, হাতে কাঠের চুড়ি, মাটির বা কাপড়ের দুল, ফুলের মালা, রঙিন কাপড়ের ব্যাগ এমনকি পায়ে শীতলপাটির স্যান্ডেলও বৈশাখে মানিয়ে যায় কিশোরীদের। আর সেটা পোশাকের রঙে না মেলালেও চলে।
তবে টপ-জিনস পরে যারা অভ্যস্ত, তাদেরও উৎসবের আমেজে কমতি হবে না। কিশোরীদের জন্য পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকগুলোতেও লেগেছে বৈশাখের রং। ক্যাটস আইয়ের ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগের পরিচালক রুমায়লা সিদ্দিকী বলেন, পয়লা বৈশাখে পালাজো প্যান্ট অনেক বেশি মানাবে কিশোরীদের। সঙ্গে আধুনিক ছাঁটের টপ পরতে পারে। দেশি কাপড়ে তৈরি পোশাকে ফিউশন করা যেতে পারে। কামিজের পেছনে দৈর্ঘ্য বেশি রাখতে পারে, সাধারণ গলার বদলে কলার ব্যবহার করতে পারে।
তবে শাড়ির মতো কিছু নয়, এ কথায় একমত ডিজাইনাররা। অভ্যাস না থাকলে শাড়ি পরতে বিপত্তি হতে পারে বলে একটু সাবধান হওয়া ভালো, বললেন ফ্যাশন ডিজাইনার শাহরুখ আমিন। তিনি বলেন, নতুন নতুন শাড়ি পরবে অনেকে, একটু অস্বস্তি লাগবে। সে ক্ষেত্রে ব্লাউজটা পরতে হবে নিজের উচ্চতা বুঝে। যারা লম্বা, তারা লম্বা ব্লাউজ পরতে পারে। আজকাল টপসের মতো কাটের ব্লাউজও পাওয়া যাচ্ছে। তবে খাটোদের লম্বা ব্লাউজ পরলে আরও খাটো লাগবে। আরামের জন্য ব্লাউজটা সুতি, খাদির হওয়া ভালো। গলায় কনট্রাস্ট রং ব্যবহার করা যেতে পারে। গামছা প্রিন্টের বর্ডারও বেশ মানাবে।
টিনএজারদের বৈশাখী সাজ রঙিন কিন্তু ছিমছাম হওয়াই ভালো বলে মনে করেন রেড বিউটি স্যালনের প্রধান রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভিন। তিনি বলেন, ‘ত্বকের স্বাভাবিক সতেজতা ধরে রেখে রঙের খেলায় মাতুক কিশোরীরা। চুলে লাল রং করতে পারে। নখে লাল-সাদার নেইল পেইন্টিং করা যেতে পারে। বেজ মেকআপ হালকা হওয়া ভালো। মোটা করে কাজল আর টিপ, হালকা রঙের ঠোঁট। ব্যস, যথেষ্ট।’
তাঁর মতে, বড়জোর কাজলটা রঙিন হতে পারে, দুটি শেডের লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারে, যাকে ওমব্রে বলা হয়। সবচেয়ে আকর্ষণীয় সাজ হতে পারে চুলে। মজার মজার বেণি মানাবে সব পোশাকেই। যেমন মাথার এক পাশ থেকে শুরু হয়ে আরেক পাশে শেষ হওয়া বেণি অথবা প্যাঁচানো খেজুর বেণি। মাথাজুড়ে অসংখ্য বেণি করে রাখল আগের রাতে, সকালে খুলে দিল। অগোছালোভাবের এমন হেয়ারস্টাইল এখন বেশ চলছে। এ ছাড়া পনিটেইল তো থাকছেই। শাড়ি পরলে একপাশে খোঁপা, টুইস্ট খোঁপা বা পুরো মাথায় চার-পাঁচটা খোঁপা থাকল। খারাপ দেখাবে না কিছুতেই। বয়সটাই যে ভালো লাগার!