• মঙ্গলবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

লোধি গার্ডেনে হাসিনা-থাকছেন লুটেনস বাংলো জোনে


প্রকাশিত: ১০:১৯ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪১ বার

 

 

কূটনৈতিক রিপোর্টার : ভারতের নয়াদিল্লির লোধি গার্ডেনের লুটেনস বাংলো জোনে একটি সুরক্ষিত বাড়িতে রয়েছেন দেশত্যাগি শেখ হাসিনা। ভারত সরকারই তাঁর থাকার জন্য বাড়িটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তাঁকে কে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিচ্ছে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দারা। বাংলোর পাশে লোধি গার্ডেনে মাঝে মধ্যে হাঁটতেও বেরুচ্ছেন শেখ হাসিনা। সেখানেও তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে সাদা পোশাকধারীরা।তবে তাঁর সঙ্গে শেখ রেহানা আছেন কিনা তা নিশ্চিত করেনি ভারতীয় গনমাধ্যম। বৃহস্পতিবার ভারতের প্রভাবশালী গনমাধ্যম ‘দ্যা প্রিন্ট’ এ রিপোর্ট প্রকাশ করে।

এর আগে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। এরপর থেকে তাঁর অবস্থান নিয়ে জল্পনা–কল্পনা শুরু হয়। তবে ভারত সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি। তবে আজ বৃহস্পতিবার ভারতের গণমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনা দিল্লিতে আছেন।

দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার মর্যাদা অনুসারে তাঁকে থাকার জন্য বেশ বড়সড় বাংলো দেওয়া হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের বাংলো ভারতের মন্ত্রী, পার্লামেন্ট সদস্য ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে শেখ হাসিনার গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে দ্য প্রিন্ট ওই বাংলোর প্রকৃত ঠিকানা বা সড়ক নম্বর প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তার খাতিরে যথার্থ প্রটোকল সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা মাঝেমধ্যে লোধি গার্ডেনে হাঁটতে বের হন।সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার জন্য কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাদাপোশাকে ২৪ ঘণ্টা তাঁর চারপাশে নিরাপত্তারক্ষীরা থাকেন। বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে তিনি এই পর্যায়ের নিরাপত্তা পাচ্ছেন। সূত্র আরও জানায়, তিনি এই বাড়িতে দুই মাসের বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন। এখানে তাঁর থাকার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কয়েকটি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে গত ৫ আগস্ট বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে করে বাংলাদেশ থেকে দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের কাছে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছান। সেদিন তাঁর সঙ্গে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা বিমানঘাঁটিতে দেখা করেন। এরপর দুদিনের মধ্যে তিনি বিমানঘাঁটিটি ছেড়ে যান।

দ্বিতীয় আরেকটি সূত্র জানায়, ওই বিমানঘাঁটিতে তিনি লম্বা সময় থাকতে পারতেন না। কারণ, সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। তাই কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং দিল্লির নিরাপদ ও সুরক্ষিত লুটেনস এলাকায় তাঁর জন্য একটি বাড়ির ব্যবস্থা করা হয়।এই এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। এখানে অনেক সাবেক ও বর্তমান পার্লামেন্ট সদস্যের বাড়ি রয়েছে।শেখ হাসিনা বাড়ির বাইরে চলাফেরা করেন কি না, জানতে চাইলে সূত্র জানায়, ‘কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে মূল নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দলকে জানানো হয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারকে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে গত আগস্টে ভারতের লোকসভায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, ওই সময় ‘কিছু সময়ের জন্য’ ভারতে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনার সঙ্গে একই ফ্লাইটে ভারতে গিয়েছিলেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক দেশটিতে লেবার পার্টির একজন নেতা। শেখ রেহানা এখনো বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতে আছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।

শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ভারতের দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কার্যালয়ে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ থেকে তিনিই প্রথম এই পদধারী। বর্তমানে দিল্লিতে বসবাস করছেন সায়মা ওয়াজেদ।

গত সপ্তাহে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। ২০১০ সালে এই ট্রাইবুন্যাল গঠন করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। গত জুলাই ও আগস্টে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তিনিসহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং আরও ৪৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন এই ট্রাইব্যুনাল।শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে পরোয়ানাটি জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার। কৌঁসুলিদের এ–সংক্রান্ত দুটি আবেদনের পর ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার ৬০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে হাজির করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইবুন্যাল।