কলকাতা থেকে মিরা নায়ার : লেডি অব দ্য হার্ল বিনু’র স্বপ্নের ব্রেক -। ‘হোয়েন দ্য গোয়িং গেট্স টাফ, দ্য টাফ গেট গোয়িং’ —ফেসবুকে তাঁর শেষ কথা ছিল সেটাই। দুর্নিবার গতি নিয়ে তাঁর সেই স্বপ্নে বাদ সাধল গতিই। চুয়াল্লিশেই থেমে গেল ‘লেডি অব দ্য হার্লের’ স্বপ্ন উড়ান। পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন দেশের জনপ্রিয় মহিলা বাইকচালক বিনু পালিওয়াল।
মোটরবাইকে ভারত অভিযানে বেরিয়েছিলেন বিনু। সঙ্গী হয়েছিলেন দীপেশ তনওয়ার নামে আর এক বাইকচালক। সোমবার সকালে লখনউ থেকে হার্লে ডেভিডসন বাইকে চেপে ভোপালের উদ্দেশে রওনা হন বিনু ও দীপেশ। লক্ষ্য ছিল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। কিন্তু শেষ করা হল না। সোমবার মধ্যপ্রদেশের বিদিশার কাছে গ্যারসপুর এলাকায় এসে পিছলে যায় বাইকের চাকা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি বিনুকে। ওই দিন বিকেলে মৃত্যু হয় বিনুর।
জয়পুরে জন্ম বিনুর। সেখানেই বড় হয়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই বাইক চালানোর স্বপ্নটা মিশে গিয়েছিল বিনুর রক্তে। তার পিছনে সব চেয়ে বড় অবদান অবশ্য ছিল তাঁর বাবার। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে মোটরবাইক কেনার মতো সামর্থ বিনুদের ছিল না। তাই কলেজে পড়া অবধি বাইক চালাতেই জানতেন না তিনি। কলেজে গিয়ে বন্ধুদের উৎসাহ আর নিজের স্বপ্নের তাগিদ থেকেই শিখে ফেলেছিলেন বাইক চালানোটা।
কিন্তু স্বপ্নপূরণ তখনও এত সহজ ছিল না। বিয়ের পর বাইক অভিযানের স্বপ্নে তালা পড়ল বিনুর। স্ত্রীর এই ‘দুঃসাহসিক’ কাজে মত ছিল না বিনুর স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকেদের। তাই বলে স্বপ্নের সঙ্গে আপস করেননি তিনি। দুই ছেলেমেয়ে আর নিজের প্রিয় বাইকটিকে নিয়েই স্বামীর ঘর ছাড়েন বিনু। বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে প্রত্যেক সপ্তাহেই দিল্লি বা জয়পুরের বিভিন্ন জায়গায় বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন তিনি।
ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে হার্লে ডেভিডসন ছোটাতেন। গত বছর নভেম্বরে ১৭ হাজার কিলোমিটার বাইক অভিযানের রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। এ বছর ৫০ হাজার কিলোমিটার বাইক যাত্রা করে নতুন রেকর্ড গড়বার ইচ্ছে ছিল তাঁর। ইচ্ছে ছিল বাইক অভিযান নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানানোর। রাজনীতিতে এসে পথসচেতনতা নিয়ে কাজ করারও ইচ্ছে ছিল বিনুর। কিন্তু তার আগেই থেমে গেল বিনুর স্বপ্নের চাকা। আরও অনেকগুলো ইচ্ছের মতোই বাকি থেকে গেল তাঁর মেয়েকে নিজের হাতে ধরে বাইক চালাতে শেখানোর ইচ্ছেটুকুও।