লেডিকিলার গুরু রামসিং বেকায়দায়
ইন্ডিয়া থেকে মীরা নায়ার : ভারতে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা জুড়ে যার লক্ষ লক্ষ অনুগামী, সেই বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণের মামলার রায় ঘোষণার আগে ওই দুই রাজ্যে চরম সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে। হরিয়ানার পাঁচকুলার একটি আদালত শুক্রবার এই মামলার রায় দেবে, তার আগেই ওই ধর্মগুরুর হাজার হাজার ভক্ত সেখানে গিয়ে অবস্থান নিয়েছেন ও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন।
ওই দুই রাজ্য জুড়ে বাড়তি কয়েকশো কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে – প্রচুর লোককে গ্রেফতার করতে হতে পারে আশঙ্কায় পুলিশ একটি গোটা স্টেডিয়ামও অধিগ্রহণ করে রেখেছে। কিন্তু কেন বাবা রাম রহিমের মামলার রায় নিয়ে এই নজিরবিহীন প্রস্তুতি? আসলে ভারতের অজস্র গডম্যান বা ধর্মগুরুর মধ্যেও বাবা রাম রহিমের মতো বর্ণময় চরিত্র সম্ভবত আর একটিও নেই। তিনি একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, সিনেমার নায়ক ও পরিচালক।
হরিয়ানার সিরসায় তার ‘ডেরা সাচ্চা সওদা’ আশ্রমের প্রাঙ্গণে নিয়মিত বসে পপ কনসার্ট। সেখানে গান ডেরার প্রধান, গুরমিত রাম রহিম সিং নিজেই – তার তুমুল জনপ্রিয় ‘ইউ আর মাই লাভ চার্জারে’র মতো আরও অনেক গান! ‘এমএসজি : মেসেঞ্জার অব গড সিরিজে’র যে সিনেমাগুলোতে বাবা রাম রহিম নিজেই নায়ক গুরুজির অভিনয় করেছেন, হাজার হাজার গাড়ির কনভয় নিয়ে সেই ছবি দেখতে এমে তার ভক্তরা একাধিকবার দিল্লির কাছে গুরগাঁও অচল করে দিয়েছেন!
শিখ, হিন্দু, মুসলিম সব ধর্মের চেতনার মিশেলেই তৈরি হয়েছে তার কাল্ট – কিন্তু পনেরো বছর আগে নিজের আশ্রমেই দুজন ভক্ত মহিলাকে ধর্ষণ করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রায় দশ বছর ধরে শুনানির পর অবশেষে শুক্রবার সেই মামলায় পাঁচকুলার সিবিআই আদালত রায় ঘোষণা করবে বলে কথা রয়েছে – আর তাকে ঘিরেই তটস্থ হয়ে রয়েছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে কোনও বেচাল বরদাস্ত করা হবে না। এই মামলায় রায় দেবে সিবিআই আদালত – আর তা শুধু পাঞ্জাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না – কিন্তু কেউ যদি রায়কে অজুহাত করে হাঙ্গামা তৈরি করতে চায় শক্ত হাতে আমরা তার মোকাবিলা করব।
হরিয়ানার পুলিশ প্রধান বিএস সান্ধুও জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্র তাদের বাড়তি আধাসামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে – রাজ্যেও সব পুলিশকর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের কৌশল তৈরি – কেন্দ্রের পাঠানো আধাসেনা ও রিজার্ভ পুলিশ কোম্পানিদেরও রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে। রায় ঘোষণার পর পরিস্থিতি যাতে শান্তিপূর্ণ থাকে, তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
ধর্ষণ মামলার রায় গুরুর বিপক্ষে গেলে বাবা রাম রহিমের শিষ্যরা ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু করে দিতে পারে, সেই আশঙ্কা থেকেই এই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। ধর্মগুরুর ভক্তরা, যাদের তিনি ‘প্রেমী’ বলে ডাকেন – তারা এর মধ্যেই পাঁচকুলা-সহ বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করে তাদের ভাষায় ‘রোষ প্রদর্শন’ শুরু করে দিয়েছেন।
এমনই একটি বিক্ষোভে ডেরার মুখপাত্র সন্দীপ শর্মা বলেন, “দুই রাজ্যের প্রতিটি ব্লকেই এমন সমাবেশ হচ্ছে। আমরা দুশো লোক হবে ভাবছি, জুটে যাচ্ছে পাঁচশো লোক। বাবার অবমাননার কোনও চেষ্টা হলে তারা এভাবেই লাগাতার রোষ প্রদর্শন করে যাবে।”
২৫ আগস্ট রায় ঘোষণার দিন বাবা রাম রহিমকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে নিজের চোখে ‘দর্শন’ করার জন্যও প্রচুর ভক্ত সেখানে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রায় বিরুদ্ধে গেলে তার লক্ষ লক্ষ প্রেমী ভক্ত সেদিন আইন অমান্য করতে পারে, এই আশঙ্কায় তাদের আটক করে রাখার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে চন্ডীগড়ের কাছে তাউ দেবীলাল স্টেডিয়ামও। আবার তিনি অব্যাহতি পেলে পাঞ্জাবের কট্টর শিখ সংগঠনগুলো প্রতিবাদে রাস্তায় নামবে – সেই আশঙ্কাতেও ভুগছে প্রশাসন!