লুটেরা সিন্ডিকেটে ৪০ কোটি বই-প্রমাণ পেয়েও এনসিটিবিটি পদক্ষেপ নেয়নি
লাবণ্য চৌধুরী : জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি কর্তৃক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই বিতরণ নিয়ে সিন্ডিকেট লুটপাট হলেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। একই ধারাবাহিকতায় এবার ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপা হচ্ছে। এবারও একই কায়দায় সিন্ডিকেট লুটপাটের ব্যবস্থা পাকা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চলতি শিক্ষাবর্ষে ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির প্রায় ৩ কোটি নিম্নমানের বিনামূল্যের পাঠ্যবই তৈরি করে বিতরণ করা হয়। বই মুদ্রনকারী ৮২টি প্রেস বই মুদ্রণ বিতরণ নিয়ন্ত্রক এনসিটিবি’র যোগসাজশে বিপুল অংকের টাকা লুটপাট করলেও কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বই মুদ্রনকারী একই চক্র এবারও নিম্নমানের বই ছাপার অনুমোদন পেয়ে লুটপাট পরিকল্পনা পাকাপোক্ত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করা হয়েছে প্রেসগুলো ‘নিম্নমানের’ কাগজে বই তৈরি করে সিন্ডিকেট লুটপাট করেছে। লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ৮২টি প্রেস মালিক। এদের সঙ্গে লুটের টাকার ভাগ পেয়েছে ইন্সপেকশন এজেন্টরাও। দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন এর অনুসন্ধানে এবারও লুটপাট প্রক্রিয়া পাকাপোক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে ৮২টি প্রেস প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৩০ কোটি বই ছাপে। এসব বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেছে এনসিটিবি। এর মধ্যে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির মাধ্যমিক, দাখিল, ইংরেজি ভার্সন, কারিগরি, এসএসসি ভোকেশনাল, দাখিল ভোকেশনাল ও ব্রেইল বইসহ প্রায় ২১ কোটি বই ছাপ হয়। বইয়ের মুদ্রণ ও বিতরণ কাজ তদারকি করে এনসিটিবির নিয়োগ করা তৃতীয়পক্ষ প্রি-ডেলিভারি ইন্সপেকশন (পিডিআই)। এরা ‘অনুমোদনহীন নিম্নমানের কাগজে’ ১২-১৩টি প্রেসের বই ছাপা হয় বলে জানালেও কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালন করে।
এখানেই দুর্নীতির সূত্রপাত হয় এনসিটিবির। ‘এরা বছরের প্রথম দিন বই দিতে হবে’ এমন অজুহাত তুলে আওয়ামী সরকারের ওপরের নির্দেশ রয়েছে বলে অভিযোগ সমূহ ধামাচাপা দিয়ে সিন্ডিকেট দুর্নীতি করে। তবে বই ছাপার প্রথম দিকে এজেন্টের অভিযোগের বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও নতুন বছর আসার সময় সব পাল্টে যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়ে নিম্নমানের এসব বই সরবরাহ মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির মধ্যে বিতরণ করা হয় নিম্নমানের বই সমূহ। জানা গেছে, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোর অভিযোগের বিষয়ে এনসিটিবিকে চিঠি দেওয়া হলে অভিযুক্তরা প্রেস মালিকরা ইন্সপেকশন এজেন্টের লোকদের হুমকিও দেয়। হুমকির বিষয়টি এনসিটিবিকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর এই ব্যবস্থা না নেয়ার নেপথ্যে ছিল সিন্ডিকেট ঘুষ ভাগ বাটোয়ারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনসিটিবির নিয়োগ করা ইন্সপেকশন এজেন্ট শেখ ট্রেডিং অ্যান্ড ইন্সপেকশন সার্ভিসেসের স্বত্বাধিকারী রাফি মাহমুদ (বিপ্লব) ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর নিম্নমানের বই সম্পর্কে এনসিটিবিকে চিঠি দেয়। যার স্মারক নং-এসটিআইএস/এনসিটিবি… নিম্নমান/২০২৪/২০২৩/১৮১২)। তারা এনসিটিবিকে জানায়, নিম্নমানের কাগজ দ্বারা মাধ্যমিক স্তরের নবম শ্রেণির কিছুসংখ্যক পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ/বাঁধাই করার সময় আমাদের পরিদর্শক দল তা চিহ্নিত করে। পরিদর্শক দল নিম্নমানের কাগজে মুদ্রণকৃত বইয়ের ফর্মা সংগ্রহ করেও এনসিটিবিকে দেয়।
কিন্তু এনসিটিবি এসব দুর্নীতি লুটপাট জেনেও কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে তা ধামাচাপা দেয়। লুটেরা চক্রটি ৭০ জিএসএমের স্থানে ৫৭ জিএসএমের (নিউজ প্রিন্ট জাতীয়) কাগজ দ্বারা বই ছেপে সিন্ডিকেট লুটপাট চালায়। লুটের ভাগ পেয়ে নিম্নমানের এসব বই গ্রহণ করে এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম। নিম্নমানের বইয়ের বিষয়ে আরো অভিযোগ করেছেন, পোস্ট ল্যান্ডিং ইন্সপেকশন (পিএলআই) এজেন্ট শেখ বেলাল হোসেনও।