• বুধবার , ২০ নভেম্বর ২০২৪

লুটপাটে রাস্তার বারোটা


প্রকাশিত: ৯:২২ পিএম, ২ জুলাই ২৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৬ বার


ডিমলা সেচ ক্যানেল রাস্তার বেহাল দশা-

 

নীলফামারী প্রতিনিধি : নীলফামারী জেলার ডিমলায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা নদীর প্রধান সেচ ক্যানেলের পরিদর্শন সড়ক সংস্কারের এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই সড়কের পিচ সূর্যের তাপে উঠে যাচ্ছে। সড়কে যান চলাচলে মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যানের চাকায় আবার পথচারীর পায়ে পিচ লেগে যাচ্ছে। এ ছাড়া যানবাহনের চাকার দাগ বসে যাচ্ছে। এমনকি পা দিয়ে ঘষলেই উঠে যাচ্ছে সদ্য নির্মিত কার্পেটিং। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার, দরপত্র অনুসারে কাজ না করা, সঠিক তদারকির অভাব এবং অপরিকল্পিত কার্পেটিং করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।সড়কে চলাচলকারীরা জানান, সড়কের প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশ জায়গার পিচ গলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পিচ উঠে গাড়িসহ নষ্ট হচ্ছে চালকের জামাকাপড়। আর সঠিক তদারকির অভাবে সড়কে অপচয় হচ্ছে সরকারি অর্থ!

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দে তিস্তা নদীর প্রধান সেচ ক্যানেলের ডালিয়া-দুন্দিবাড়ী পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৯ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ পায় আবুল কালাম নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে কাজটি সম্পন্ন করেছেন লোকমান হোসেন নামের সাব-ঠিকাদার। দরপত্রে শতভাগ এলসির ভাঙা পাথর ও দেশি বিটুমিন দিয়ে পরিদর্শন সড়কটি সংস্কার করার কথা। অথচ কম দামি স্থানীয় লোকাল পাথর ও ইরানি বিটুমিন দিয়ে গত সোমবার (১৫ জুন) সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ করেন সাব-ঠিকাদার লোকমান হোসেন। সরেজমিন দেখা যায়, সড়কজুড়ে কালো পিচ গলে উঠে যাচ্ছে। সড়কের কয়েকটি স্থান ধসে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের দুই পাশের বেশিরভাগ জায়গায় ইটের রেজিং নেই। সড়কে হাঁটাচলায় পায়ের জুতায় বিটুমিন ও কার্পেটিং উঠে আসে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। অথচ সড়কটির কার্পেটিং মাত্র ৭/৯ মিলিমিটার করা হয়েছে। পরিমাণে বিটুমিনও দেওয়া হয়েছে কম। সড়ক সংস্কারের পর ওই সড়কটি উঁচুনিচু ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া কার্পেটিংয়ের আগে হাওয়া মেশিন দিয়ে সড়কের ধুলাবালি পরিষ্কার করার কথা। তা না করেই ধুলা-ময়লার ওপরই কার্পেটিং করেছেন ঠিকাদার। অফিস পক্ষে থাকায় এলসি ভাঙা পাথরের পরিবর্তে স্থানীয় গোটা পাথর ব্যবহারের সময় প্রতিবাদ জানালেও লাভ হয়নি। একপর্যায়ে এলাকার লোকজন সড়কের কয়েক স্থানে হাত দিয়ে কার্পেটিং উঠে যাওয়া ও বিটুমিন গলে যাওয়ার দৃশ্য দেখান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও পাউবো প্রকৌশলীদের যোগসাজশে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও ইরানি বিটুমিন দিয়ে সড়কটি তড়িঘড়ি করে সংস্কার কাজ শেষ করেছেন। মাত্র পাঁচ থেকে ছয় দিনে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কাজ করে শতভাগ কাজ সম্পন্ন দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।অটোভ্যানচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, গত সাত দিনেই সড়কের পিচ গলে উঠে যাচ্ছে। কার্পেটিং করার পর সড়কে অনেক উঁচুনিচু ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সড়ক ও মহাসড়কে যে, ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের পিচ ব্যবহার করা হয়। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ ৪৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এই মানের পিচ গলে যায়। সরকারি প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) উৎপাদিত পিচের গলনাঙ্ক ৫২ থেকে ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর পলিমার মডিফাইড বিটুমিনের (পিএমবি) গলনাঙ্ক ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।

সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বেশিরভাগ সময় ৫২ থেকে ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকার পরও সড়কের পিচ গলে যায় না। আমাদের এখানে ভেজাল বিটুমিন ব্যবহার করা না হলে মাত্র ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পিচ গলে যাওয়ার কথা নয়।

এদিকে, সড়কটির সংস্কার কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও দেশি গোটা পাথর এবং পরিমাণে বিটুমিনের ব্যবহার কম দেওয়ার অভিযোগ সাব-ঠিকাদার লোকমান হোসেন অস্বীকার করলেও এলাকাবাসি বলেছেন সঠিকভাবে তদন্ত করলে রাস্তা নির্মাণের লুটপাট বেরিয়ে পড়বে। এদিকে সড়ক পরিদর্শনে আসা ডালিয়া পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাশেম জানান, বিটুমিন গলে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা (প্রিন্স) বলেন, বিষয়টি শুনেছি। বর্তমান তাপমাত্রায় বিটুমিন গলে যাওয়ায় কথা নয়। সরেজমিন পরিদর্শন করে অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।