লুইস স্যামুয়েল ঝড়ে হারলো তামিমরা
আর এইচ মানব : লুইস স্যামুয়েল ঝড়ে হারলো বিশ্ব একাদশের তামিমরা। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেডিয়াম ঠিক করার জন্য আর্থিক তহবিল গঠনে লর্ডসে আয়োজন করা হয়েছিল প্রদর্শনী টি-টুয়েন্টি ম্যাচ। বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে ঝড় তুলে ম্যাচটা নিজেদের করে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্ব একাদশকে তারা হারিয়েছে ৭২ রানের বিশাল ব্যবধানে।
২০০ রানের বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ইকবালের উইকেট হারিয়ে শুরুতেই হোঁচট খায় বিশ্ব একাদশ। ক্যারিবীয় বোলিং তোপে ক্রমেই লণ্ডভণ্ড হাতে থাকে তাদের টপঅর্ডার। থিসারা পেরেরার একার লড়াই কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। এ লঙ্কান অলরাউণ্ডারের ৩৭ বলে ৬১ রানের ইনিংসের পরও ১২৭-এ আটকে যায় তারকাসমৃদ্ধ দলটি। তখনও রয়ে যায় ২০টি বল।
ম্যাচে ৮ বল খেলে টাইগার ওপেনার তামিম করেন ২ রান। এ বাঁহাতি এন্ড্রু রাসেলের বলে এভিন লুইসের হাতে ক্যাচ দেন। অন্য ওপেনার লুক রঞ্চি ফেরেন রানের খাতা খোলার আগেই। কিউই ব্যাটসম্যান লেগস্পিনার সুলেমান বদ্রির বলে এলবিডব্লিউ। ৮ রান তুলতে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলা বিশ্ব একাদশ আর খেলায় ফিরতে পারেনি। ৪৫ রানে পাঁচ উইকেট হারালে তাদের হার হয়ে যায় সময়ের ব্যাপার।
কেসরিক উইলিয়ামস নেন তিন উইকেট। বদ্রি ও রাসেল নেন দুটি করে উইকেট। কিমো পল ও ব্র্যাথওয়েট পান একটি করে উইকেট।টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৯৯ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল সুবিধা করতে না পারলেও এভিন লুইস, মারলন স্যামুয়েলস, দিনেশ রামদিন, আন্দ্রে রাসেলের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহ গড়ে ক্যারিবীয়রা।
ওপেনিং জুটি ৭৫ রানের হলেও তাতে গেইলের অবদান ২৮ বলে ১৮ রান। একমাত্র বাউন্ডারির দেখা পান ১৪ বল খেলার পর। আর ২৬ বলে ৫৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে রানের চাকা সচল করে দিয়ে যান বাঁহাতি ওপেনার লুইস। রশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে মারেন ৫টি চার ও ৫টি ছক্কা। দলীয় ৮৭ রানের মাথায় লু্ইসকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান শোয়েব মালিক।
দলের রান তিন অঙ্ক ছুঁতেই বিশ্ব একাদশের অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদির বলে স্টাম্পড হয়ে ফেরেন তিনে নামা আন্দ্রে ফ্লেচার (৭)। ২৫ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট হারালেও অবশ্য রানের চাকা থেমে থাকেনি ক্যারিবীয়দের। স্যামুয়েলস ২২ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে বড় সংগ্রহের পথে রাখেন দলকে। চার ছক্কা ও দুই চারে ইনিংসটি সাজিয়ে রশিদের দ্বিতীয় শিকার হন এ ডানহাতি। রামদিন ২৫ বলে ৪৪ ও রাসেল ১০ বলে ২১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকলে রানের চূড়ায় ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তিন লেগস্পিনার- তিন লেগস্পিনার খেলিয়েও সুবিধা করতে পারেনি বিশ্ব একাদশ। রশিদ দুটি উইকেট নিলেও ছিলেন খরুচে। ৪ ওভারে দিয়েছেন ৪৮ রান। আফ্রিদি ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে নিয়েছেন একটি উইকেট। সাকিব আল হাসানের জায়গায় দলে আসা নেপালের তরুণ লেগস্পিনার সন্দিপ লামিচানে এক ওভার বল করে দিয়েছেন ১২ রান। সাইডবেঞ্চে ছিলেন আরেক লেগস্পিনার আদিল রশিদ।অফস্পিনার শোয়েব মালিক ৩ ওভারে ৩১ রানে নেন একটি উইকেট। পেসারদের মধ্যে ভালো বোলিং করেছেন টাইমাল মিলস। এই ইংলিশ বোলার তিন ওভারে দেন মাত্র ১৩ রান। করেন একটি মেডেন ওভারও।
দর্শকদের ব্যাপক সাড়া: ম্যাচ শুরুর আগে লর্ডসে হানা দিয়েছিল বৃষ্টি। তার মধ্যেও লন্ডনের দর্শকরা আর্থিক তহবিল গঠনে মাঠে এসে সাড়া দিয়েছেন। গ্যালারি ছিল দর্শকে পূর্ণ। গত বছর ঘূর্ণিঝড় ‘ইরমা’ ও ‘মারিয়া’র আঘাতে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এর ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। সাহায্য করতেই প্রদর্শনী ম্যাচ আয়োজন করে আইসিসি। ম্যাচের আয়ের বড় একটা অংশ খরচ করা হবে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেডিয়াম মেরামত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য।
ব্যাটসম্যান-বোলার-ফিল্ডার-আম্পায়ার ছাড়াও ম্যাচ চলাকালীন সময়ে মাঠে কেউ থাকতে পারেন সেটি কল্পনাতীত হলেও বাস্তবেই এমনটি দেখা গেল প্রদর্শনী ম্যাচটিতে। ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বিশ্ব একাদশের ম্যাচে খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়িয়ে ধারাভাষ্য দিয়েছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন। নিয়েছেন ক্রিকেটারদের মন্তব্য।
স্টেডিয়ামে ধারাভাষ্যকারদের জন্য থাকে নির্ধারিত কক্ষ। কিন্তু লর্ডসের প্রদর্শনী ম্যাচে দেখা গেল নতুনত্ব। খেলা সম্প্রচারকারী স্কাই স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেইন মাইক্রোফোন হাতে নেমে যান মাঠে। খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়িয়ে বর্ণনা করে যান পরিস্থিতি। কখনও বোলারের পাশে, আবার কখনও উইকেটরক্ষকের পেছনে দাঁড়িয়ে দেন ধারাভাষ্য। কোন বলটি কেমন হয়েছে, শট কেমন হল তা বর্ণনা করেন খুব কাছ থেকে দেখে। ক্রিকেট মাঠে এমন দৃশ্য এটিই প্রথম। বিশেষ ম্যাচে বিশেষভাবে ধারাভাষ্য দেয়ার ব্যাপারটি বেশ আলোড়ন ফেলেছে। ভবিষ্যতে অন্যান্য ম্যাচেও এভাবে ধারাভাষ্য দেয়া হবে কিনা; সে ভাবনাও ঢুকেছে বিশ্লেষকদের মাঝে।