• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বোরকা’ নিয়ে তোলপাড়


প্রকাশিত: ৯:৪৫ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৭ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৫৮ বার

Lipstick-Under-My-Burkha-www.jatirkhantha.com.bd
বিনোদন রিপোর্টার :  ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বোরকা’ বা বোরকার নিচে লিপস্টিক নামের এক হিন্দি ছবি নিয়ে ভারতে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে সেন্সর বোর্ড এটিকে ছাড়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর।

ছবিটি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে এবং কয়েকটি পুরষ্কারও পেয়েছে। ভারতের এক ছোট শহরে বসবাস করা চার নারী চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছবির কাহিনি। এই চারজনের মনের ভেতরে লুকনো ইচ্ছেগুলি নিয়েই গল্প।
Lipstick-Under-My-Burkha-www.jatirkhantha.com.bd.2
পরিচালককে পাঠানো একটি চিঠিতে ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড জানিয়েছে যে ছবিটি ‘নারী-মুখী’ এবং সেখানে ‘অবিরত যৌন দৃশ্য এবং গালিগালাজ রয়েছে। ‘অডিও পর্নোগ্রাফি’ও রয়েছে ছবিটিতে – এটাও উল্লেখ করেছে ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড।

ওই চিঠিটিতে যে পরিমাণ ভাষা এবং বানান ভুল রয়েছে, তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম। ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বোরকা’ নামের ছবিটির এই ট্রেলার প্রকাশিত হয়েছে গতবছর অক্টোবরে।

আইএমডিবি ওয়েবসাইটে ছবিটির যে সারাংশ দেওয়া হয়েছে, তাতে লেখা রয়েছে যে ভারতের ছোট শহরের অলিগলিতে বাস করা চারজন নারীর গল্প এটি। তাদের গোপন করে রাখা ইচ্ছেগুলোর কাহিনী। এরা সকলেই নিজেদের জীবনে বাঁধা পড়ে গেছেন, কিন্তু মনের ইচ্ছেগুলো মরে নি।

ছোট ছোট ঘটনা আর কাজের মধ্যে দিয়ে এই চার নারী বেশ সাহসী হয়ে উঠেছেন আর কিছুটা বিদ্রোহও করছেন। ওই চার নারীর মধ্যে একটি চরিত্র এক মুসলমান যুবতীর।

ছবিটির পরিচালক অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব গ্লাসগোয় রয়েছেন একটি চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য। সেখান থেকে স্কাইপের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় টি ভি চ্যানেলগুলিকে জানিয়েছেন, “ছবিটা যে ছাড়পত্র পাবে না, এটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। সম্প্রতি পিঙ্ক-এর এমন কয়েকটি নারীদের গল্প নিয়ে তৈরি হওয়া ছবি মুক্তি পেয়েছে যার পরে আমার ছবিটি আটকে যাওয়া বেশ অবাক করার মতো ঘটনা।”

“প্রথমবার দেখার পরে বোর্ড সদস্যরা কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেন নি, তারপরে দ্বিতীয়বার রিভিউ করা হয়। সেদিনই মৌখিকভাবে বোর্ডের প্রধান পহলাজ নিহালনী জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ছাড়পত্র দেওয়া হবে না। এরপরে ট্রাইবুনালের কাছে আপিল করা হবে বলে ছবিটির পরিচালক অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব।

ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ডের এক সদস্য মমতা কালে জানাচ্ছিলেন, “অনেকগুলি ধারা উপধারায় এই ছবিটা আটকে গেছে। আসলে সমাজের কোন অংশের গল্প এই ছবিতে বলার চেষ্টা করা হয়েছে, সেটাই স্পষ্ট নয়। কখনই এটা বলা হয় নি যে নারীদের যে অধিকার রয়েছে, সেটা দেওয়ার বিরুদ্ধে বোর্ড। ছবিটার মধ্যে দিয়ে যে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, সেকারণেই আটকে গেছে। বারে বারে শুধু সার্টিফিকেশন বোর্ডকে দোষ দেওয়া অনুচিত।”

ছবিটি ছাড়পত্র না পাওয়ায় মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্রজগতের একটা বড় অংশ সমালোচনা শুরু করেছে ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ডের।

পরিচালক অশোক পন্ডিত জানাচ্ছিলেন, “সরকার বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বার বার বলছেন কোনও ছবির মুক্তি পাওয়া আটকানো উচিত নয়। বরং ছবিগুলোকে একেকটা শ্রেণীতে ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে। একজন গল্পকার বা পরিচালকের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। মি. পহলাজ নিহালনীর পছন্দমতো হতে হবে সব ছবি।এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়।”

সাম্প্রতিক কালে ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড এরকম একাধিক সিনেমাকে ছাড়পত্র দিতে অস্বীকার করে অথবা প্রচুর সংখ্যক দৃশ্য ছেঁটে ফেলার নির্দেশ দিয়ে সমালোচিত হয়েছে।

বোর্ড প্রধান পহলাজ নিহালনী বেশ কিছু হিন্দি ছায়াছবিতে অভিনয় করেছেন। ঘোষিতভাবেই তিনি হিন্দুত্ববাদী বি জে পি-র ঘনিষ্ঠ। তাঁর সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে এই অভিযোগ বারে বারেই উঠেছে যে হিন্দুত্ববাদীদের যে বিশুদ্ধ ভারতীয় সংস্কৃতির ভাবধারা রয়েছে, তিনি চলচ্চিত্রে সেই ভাবধারাই প্রবর্তন করতে চাইছেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার শ্যাম বেনেগালের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া একটি সরকারি কমিটিও কীভাবে ছবির ছাড়পত্র দেওয়া উচিত, তা নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কিন্তু সরকার তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয় নি।