লিটন হত্যাকারীদের শাস্তি পেতেই হবে-হাসিনা
সংসদ রিপোর্টার : সরকারদলীয় সাংসদ মনজুরুল ইসলামের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সাংসদের মৃত্যুতে আজ রোববার সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কষ্ট এই জন্য যে একটি শিশুর গায়ে গুলি লাগার ঘটনায় তাঁর অস্ত্র সিজ করা হলো। এ ঘটনার পর ও বারবার বলেছিল, তাঁকে সব সময় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে নিজেকেই চলতে হয়।’ মনজুরুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যেমন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি, সে রকম লিটনের (মনজুরুল ইসলাম) হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করব। সব সংসদ সদস্যসহ দেশবাসী যাতে নিরাপদে থাকে, সে জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করব।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী লিটন হত্যার জন্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে সারা দেশে তারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। লিটন বিএনপি-জামায়াতের ওই তাণ্ডবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সুন্দরগঞ্জে শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছিল। গোলাম আযম সুন্দরগঞ্জ গিয়েছিল মিটিং করতে।
লিটন তাকে মিটিং করতে দেয়নি। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, তারা সেই প্রতিশোধও নিতে চাচ্ছে। মনে হয়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটাই ছিল তার বড় অপরাধ। স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে লিটন।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আত্মরক্ষার্থে করা লিটনের ফাঁকা গুলিতে ২০১৫ সালে একজন শিশু আহত হয়। অপবাদ ছড়ানো হলো যে সে শিশুকে গুলি করেছে।
ও কেন শিশুকে গুলি করবে? ওই শিশু সৌরভের বাবা আওয়ামী লীগ করত। ওদের পরিবারের সঙ্গে সে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। মূল কথা হলো ওখানে লিটনকে হত্যা করার জন্য ওত পাতা হয়েছিল। তার ওপর আক্রমণ হয়েছিল। আত্মরক্ষার জন্য ফাঁকা গুলি চালাতে গিয়ে সৌরভের গায়ে লাগে। সেটা নিয়েও তো প্রশ্ন রয়েছে।
শিশু হত্যা করতে গেছে বলে পত্রপত্রিকায় এমনভাবে লিখল, সত্য কথাটা কেউ সেখানে তুলে ধরল না। এ ঘটনার পর তার অস্ত্র সিজ করা হলো। অথচ সে বলেছিল, যেকোনো সময় তাকে মেরে ফেলা হবে। তার স্ত্রীর অস্ত্রটাও সিজ করা হলো। ওর বাড়িতে পুলিশ পাহারা ছিল। নির্বাচনে পুলিশ লাগবে বলে তাদেরও তুলে নেওয়া হলো। এই সুযোগে ঘরে ঢুকে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো।’
আলোচনায় সরকার দলের সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, লিটনকে হত্যার মূল নায়ক হচ্ছে জামায়াত-শিবির-বিএনপি। এই হত্যার কোনো সাক্ষী লাগে না, প্রমাণ লাগে না। এক নম্বর আসামি বেগম খালেদা জিয়া। তাঁকে উত্তর দিতে হবে কেন লিটনকে হত্যা করা হলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, লিটনের হত্যাকারী ও পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ করছে। তার হত্যাকারী ও হত্যার পরিকল্পনাকারীকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘লিটনকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। একটি ছেলেকে গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মিডিয়া উন্মাদ হয়ে গেছিল। আমরা মিডিয়ার কাছে হেরে গিয়েছিলাম। লিটনকে নিরস্ত্র করার কারণে তাঁর এই পরিণতি হয়েছে। আমরা শত চেষ্টা করেও তাঁর বা তাঁর স্ত্রীর অস্ত্রটি ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারিনি।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘মিডিয়া লিটনকে একজন খারাপ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই সংসদকে বলব, সংসদ সদস্যদের যেন নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে দেওয়া না হয়। কোনো এমপিকে যেন একটি কাঁচা বাড়ি ভাঙার মামলায় জড়ানো না হয়।’ চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ সাংসদদের তাঁদের নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মীর শওকাত আলী বাদশা, শামীম ওসমান, মাহাবুব আরা গিনি, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন। লিটন ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, সাবেক গণপরিষদ সদস্য আবুল হোসেন, মো. আবদুল হাকিম, সাবেক সাংসদ জাফরুল হাসান ফরহাদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উস্থাপন করা হয়। পরে শোক প্রস্তাবটি সংসদে গৃহীত হয়।
এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল চারটায় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবস শুরু হয়। অধিবেশন শুরুর আগে বেলা তিনটায় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধিবেশন আগামী ৯ মার্চ পর্যন্ত চালবে।