লাশ আটকিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের ঘৃণ্য ব্যবসা
লাবণ্য চৌধুরী, ঢাকা:
লাশ আটকিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল ঘৃণ্য ব্যবসা শুরু করেছে।ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা ছাড়া সাধারন মানুষের কোন দুঃখ দরদ এবং চিকিৎসা বুঝে না।
চিকিৎসাকালিন সময়ে এই হাসপাতালে রোগি মারা গেলেও এর কর্তৃপক্ষ টাকা বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত লাশ আটকিয়ে রাখে।স্বাস্থ্য মন্ত্রীর ছেলে ফোন দিলেও এদের মন গলেনা। এরা টাকা চায় এর পর দেবে লাশ।এই ঘটনার করুণ শিকার রাজধানীর দিলু রোডের মোঃ আসলাম।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ রকম খবর পাওয়ার পর একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,চিকিৎসা খরচের টাকা না দেওয়ায় এক ব্যক্তির লাশ আটকে রেখেছে রাজধানীর গুলশানের বেসরকারি সেবাপ্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড হাসপাতাল।
মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা চিকিৎসার পুরো বিল জোগাড় করতে পারেননি। বিলের কিছু অংশ এখন পরিশোধ করে বাকিটা পরে দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁরা লাশ নিতে চেয়েছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, বাকি টাকা না পেলে তারা লাশ দেবে না।
মৃত ব্যক্তির নাম মো. আসলাম (৫৪)। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে তিনি ওই হাসপাতালে মারা যান।
পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আসলাম রাজধানীর মগবাজারের দিলু রোডের বাসিন্দা। আগে তিনি শেয়ারব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি দুই সন্তানের জনক। ফুসফুসে সমস্যাজনিত কারণে গত ৩ জুলাই তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আসলামের মেয়ে সাদিয়া ইসলাম বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা বাবদ আমাদের হাতে বিলের একটি কাগজ দেয়। প্রায় ৩১ লাখ টাকা বিল এসেছে। আমরা তাত্ক্ষণিকভাবে প্রায় ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করি। বাকি প্রায় ১৯ লাখ টাকা পরে দেওয়া হবে বলে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কথাও বলি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, বাকি টাকা না দেওয়া পর্যন্ত লাশ দেওয়া হবে না।’
সাদিয়া ইসলাম আরও জানান, তাঁর বাবার চিকিৎসার জন্য অনেক খরচ হয়েছে। এ মুহূর্তে তাঁদের কাছে কোনো টাকা নেই। সাহায্যের জন্য পত্রিকাতেও বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেখিয়েও মন তো গলাতে পারেননি, বরং উল্টো তাঁদের সঙ্গে কয়েকজন কর্মকর্তা দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেন সাদিয়া।
আজ শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সাদিয়া ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা হাসপাতালে লাশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
হাসপাতালের অর্থ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক কাজী মো. সেলিম বলেন, তাঁদের আগেই বলা হয়েছিল, আসলামের শারীরিক অনেক সমস্যা আছে। তাঁর দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা দরকার। খরচও অনেক হবে। আসলামের স্বজনেরা এতে রাজি হওয়ায় আসলামকে ভর্তি করা হয়।
সেলিম আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলেও আমাদের ফোন করেছিলেন। আসলে আমরা বাকি টাকা না দিলে লাশ দেব না। তবে আলোচনার মাধ্যমে কিছু ডিসকাউন্ট করাতে পারব। লাশ আমাদের হিমঘরে ভালোভাবেই আছে।’