• বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর ২০২৪

লন্ডনে বসে কলকাটি নাড়ছে আশরাফুজ্জামান-মুঈনুদ্দীন


প্রকাশিত: ১:০৪ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ১৫ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৬ বার

mardara shelter Uk-www.jatirkhantha.com.bdএস রহমান:    বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী দুই বদর নেতা এখনও বহাল তবিয়তে লন্ডনে বসে কলকাটি নাড়ছে । দুই বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী আলবদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীন। একাত্তরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে দুই বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের সর্বোচ্চ সাজার রায়ের পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও দেশের বাইরে বহাল তবিয়তে আছেন তারা।

২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাদের বিরুদ্ধে।

এরপর দুই বছরেও জামায়াতে ইসলামী তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পলাতক এই দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে ফেরাতে কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি।ট্রাইব্যুনালে দেওয়া তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে পলাতক আশরাফুজ্জামান বর্তমানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে, আর মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে।

সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে যোগাযোগ করা হলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারকে আমরা বলেছি, আদালতের কাগজপত্র দিয়েছি। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার বলেছে, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে রিপ্যাট্রিয়েট করেন না।এজন্য বাংলাদেশি প্রবাসী কমিউনিটি যারা আছেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যদের যারা আছেন, তাদেরকে ব্রিটিশ সরকারের সাথে বা বিভিন্ন পর্যায়ে যখনি আলাপ, আলোচনা হয়, তখনই বিষয়টি তোলার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি।

তাদের ফিরিয়ে রায় কার্যকরের জন্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের যেন তারা বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয় সে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আশরাফুজ্জামানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমেরিকা থেকে এখনও অফিসিয়াল কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এখানে শনাক্ত করারও ব্যাপার আছে। লন্ডনে মুঈনুদ্দীন সাহেবকে দেখা যায়। কিন্তু আমেরিকার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন।এ দুই ‍যুদ্ধপরাধীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত ১৮ বুদ্ধিজীবীকে হত্যার ১১ অভিযোগের সবগুলোতেই দুই আসামির সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় ‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন বিচারক।

রায়ের দিন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান বলেছিলেন, “আমরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই মত দিচ্ছি, আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের সর্বোচ্চ শাস্তির আদেশ না দিলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না।আশরাফুজ্জামান ও মুঈনুদ্দীন ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কীভাবে আল বদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলেন, তা উঠে এসেছে ওই রায়ে। এতে বলা হয়, আশরাফুজ্জামান খান ছিলেন সেই হত্যাকাণ্ডের ‘চিফ এক্সিকিউটর’। আর চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ছিলেন সেই পরিকল্পনার ‘অপারেশন ইনচার্জ’।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশরাফুজ্জামানের নাখালপাড়ার বাসা থেকে উদ্ধার করা তার ব্যক্তিগত দিনপঞ্জিতে এই হত্যা পরিকল্পনা ও একটি তালিকাও পাওয়া যায়।এ দুই বদর নেতা ও তাদের সহযোগীদের হাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ড. সিরাজুল হক খান, ড. আবুল খায়ের, ড. ফয়জুল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা ও ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য।

সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, সৈয়দ নাজমুল হক, এএনএম গোলাম মুস্তাফা, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লাহ কায়সার এবং চিকিৎসক মো. মর্তুজা, মো. ফজলে রাব্বি ও আলিম চৌধুরীকেও হত্যার পর গুম করেন তারা।আদালতের কাছে পলাতক থাকায় এই আসামিদের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের কোনো আইনগত অধিকার নেই। আপিলের নির্দিষ্ট সময়সীমা ১ মাস পার হয়ে যাওয়ায় এখন তারা আত্মসমর্পণ করলে বা গ্রেপ্তার হলেও তারা আপিলের সুযোগ পাবেন না বলে রাষ্ট্রপক্ষ মনে করে।