লন্ডনে জামায়াতের পক্ষে সাফাই-ইসলামি ব্যাংকের সাবেক এমডি’র গোপন রাজনীতি
এস রহমান : লন্ডনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে ধোয়া তুলসিপাতা বানালো-ইসলামি ব্যাংকের সাবেক এমডি আব্দুল মান্নান। এর উদ্দেশ্য সূদূর প্রসারি। তথ্যসূত্র মতে, স্বাধীনতা বিরোধী অপরাধে জর্জরিত দোদুল্যমান জামায়াতের নেতা হওয়া এখন তাঁর প্রধান টার্গেট। আর এজন্যই ইসলামি ব্যাংকের সাবেক এমডি আব্দুল মান্নান লন্ডনে জামায়াতকে ধোয়া তুলসিপাতা বানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন বিবিসিতে দেয়া সাক্ষাতকারে।
সূত্রমতে, ইসলামি ব্যাংকের সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন শাখায় জামায়াতের ক্যাডাররা এখনও চাকরী করছে। এর উদাহরন রয়েছে ভুরি ভূরি।জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সুপারিশ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের একটা পিয়নের চাকরীও হতো।
জামায়াত নেতাদের সুপারিশে এই মান্নান সমমনাদের ব্যাংক লোন পাইয়ে দিয়েছেন। আব্দুল মান্নানের সময় ইসলামী ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শীর্ষ পদগুলোতে যে রদবদল ঘটানো হয়েছে, তার ফলে ইসলামী ব্যাংকের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও সুদৃঢ় হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
বুধবার ব্যাংকটির বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের সভায় আরাস্তু খানকে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদুল মান্নান পদত্যাগ করেছেন বলে জানানো হয়। তার জায়গায় নতুন ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে আবদুল হামিদ মিয়ার নাম প্রস্তাব করা হয়।
ইসলামী ব্যাংকে বরাবরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর একটা বিরাট প্রভাব ছিল বলে মনে করা হয়। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকটির দিক থেকে এসব অভিযোগ জোর গলায় অস্বীকার করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সরকারী-বেসরকারী সব ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকই এখন সবচেয়ে বড় ব্যাংক। মুনাফার দিক থেকেও ব্যাংকটির অবস্থান শীর্ষে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে এটিকে বাংলাদেশের সেরা ব্যাংকের পুরস্কার দেয় লন্ডনের ফিনান্সিয়াল টাইমসের ব্যাংকার ম্যাগাজিন।
সেই পুরস্কার নিতে বিদায়ী ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদুল মান্নান লন্ডনে এসেছিলেন। সেসময় বিবিসির স্টুডিওতে এসে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পর্কের কথা জোরালোভাবে অস্বীকার করেন।
ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক কী? এ প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, “শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই ইসলামী ব্যাংকের কোন ধরণের আইনি বা অন্য কোন ধরণের সম্পর্ক নেই।”
ইসলামী ব্যাংক যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন সেখানে বিদেশি বিনিয়োগই ছিল সবচেয়ে বেশি, মোট বিনিয়োগের ৭০ শতাংশই এসেছিল ১১টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে। সেখানে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস, দুবাই ইসলামী ব্যাংক এদের বিনিয়োগ ছিল।
অন্যদিকে বাংলাদেশের যে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ, তার মধ্যে দশ শতাংশ এসেছে শেয়ার বাজারে ছাড়া আইপিও(ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং) থেকে। বাকী যে বিশ শতাংশ বিনিয়োগ, তার পঁচিশ শতাংশ দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রতিনিধি ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের একজন সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন সেখান থেকে সরকারী বিনিয়োগ তুলে নেয়ার আগে পর্যন্ত।
কিন্তু ইসলামী ব্যাংক যেভাবে পরিচালিত হতো, সেখানে জামায়াতে ইসলামীর একটা বিরাট প্রভাব ছিল, তাদের ইচ্ছেমতই সবসময় ব্যাংকটি পরিচালিত হয়েছে, এমন অভিযোগ বহুবার ব্যাংকটির বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকটি মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ইসলামী ব্যাংকের মূলধনে যেমন কোন বিশেষ দলের বা মতের সম্পর্ক ছিল না, আমাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম বা ডিপোজিট যারা করছেন, সেখানেও কোন রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা কখনো প্রমাণিত হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আমার গত ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আমরা সম্পূর্ণ পেশাদারীত্বের ভিত্তিতে এই ব্যাংকটি পরিচালনা করেছি। এবং শুধু পেশাদারীত্বের কারণেই ইসলামী ব্যাংক সারা বিশ্বে এত সুনাম অর্জন করেছে।”
ইসলামী ব্যাংক তাদের নিয়োগ, ব্যবসা, বিনিয়োগ, ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে কেবল একটি দলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ, সে অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, “এটি সম্পূর্ণ অসত্য।”