র্যাব কব্জায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ ডাকাতদের এ্যাডভেঞ্চার কাহিনী
এস রহমান : র্যাব কব্জায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ ডাকাতরা বললো তাদের এ্যাডভেঞ্চার কাহিনী। ডাকাতির সময় টাকা রিফিল করা কোম্পানি বা নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকে বড় ধরনের কোনো বাধা আসবে না নিশ্চিত হয়েই গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ব্যাংকের বুথটিতে ডাকাতির সিদ্ধান্ত নেয় ডাকাত দল।
গত ২ মার্চ রাতে কালিয়াকৈর উপজেলার হরিণহাটি এলাকার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এডাকাতির সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
এ সময় তাদের কাছ থেকেদুটি বিদেশি পিস্তল, গুলি ও দেশীয় অস্ত্রসহ ব্যাংকডাকাতির ৯ লাখ ৪ হাজার ৮৪৫ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতাররা হলো— মো. হাবীব ওরফে রুবেল (৩২), শাহাদাত (২৪), ইসমাইল (২৮), শহীদুল ইসলাম (৩৬), ফরিদ (৩৩), দেলোয়ার (২৮), ইব্রাহিম (২৩), নজরুল ইসলাম (২৩), আলমগীর হোসেন (৪৯) ও হাসান মীর (৩৪)।
বুধবার র্যাব সদর দফতরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডাকাতির টাকা শহীদকে হস্তান্তর করতে এলে জয়দেবপুর জমির উদ্দিন মার্কেটের সামনে থেকে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে রুবেলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের দেওয়া তথ্য মতে, ময়মনসিংহ থেকে ১ জন ও উত্তরা থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
ডাকাতির বিবরণ দিতে গিয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী মো. হাবীব ওরফে রুবেল তার সহযোগী মিন্টুর সঙ্গে কয়েক মাস ধরে এটিএম বুথ ডাকাতির বিষয়ে আলোচনা করে। এরপর ঘটনার পূর্বে দীর্ঘ এক মাস ধরে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা রিফিল করার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে এবং রিফিলের সময় সিকিউরিটির লোকজন কোথায় কীভাবে থাকে পর্যবেক্ষণ করে। সবকিছু দেখার পর গভীর রাতে বুথে টাকা রিফিলের সময়ই ডাকাতি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় তারা।’
ঘটনার চার দিন আগেই ডাকাতির সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মিন্টু সবাইকে আশ্বস্ত করে যে, বুথে টাকা রিফিলের সময় বড় ধরনের কোনো আঘাত বা গোলাগুলি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সবাই নির্বিঘ্নে টাকা নিয়ে চলে যেতে পারবে।’
ঘটনার দিন রাত ৯টার সময় ডাকাত দল তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে মোট ১৩ জন কাজটি সম্পন্ন করে। তিনজন দিন থেকেই সার্বক্ষণিক ওই বুথটি পর্যবেক্ষণ করে। বুথ থেকে ১০০ গজ দূরে একটি পিকআপে অস্ত্রসহ ৭ জন অবস্থান নেয়। আর বাকি তিনজন আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়।
রাত আড়াইটার দিকে টাকা রিফিল করার কোম্পানি মানি প্লান্টের মাইক্রোবাস বুথের সামনে থামলে পিকআপটি এনে মাইক্রোবাসের সামনে রাখা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এটিএম বুথের ভেতর থেকে একটি এবং সিকিউরিটির লোকজনের কাছ থেকে আরেকটি ট্র্যাংক ছিনিয়ে নেয়। এ সময় সিকিউরিটির লোকজনের সঙ্গে হাতাহাতি ছাড়া বড় ধরনের কোনো বাধার মুখে পড়েনি ডাকাত দলটি।
তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ করে তারা পিকআপটি নিয়ে ফুলবাড়িয়ার দিকে চলে যায়। পথের মাঝে পিকআপ থামিয়ে ট্র্যাংকগুলো ভেঙে তিনটি ব্যাগে টাকাগুলো ঢুকায়। ৬০ লাখ টাকার একটি ব্যাগ শাহাদাতকে, ৬০ লাখ টাকার আরেকটি ব্যাগ ইসমাইলকে দিয়ে ৬৪ লাখ টাকার ব্যাগটি রুবেল নিজের কাছে রাখে। তাদের মধ্যে কথা হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে টাকা ভাগাভাগি করবে।
ডাকাতি হওয়া ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বাকি টাকা কোথায় কার কাছে রয়েছে এ ব্যাপারে আরও জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাবে বলে জানান তিনি।ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ২ জন পুলিশের হাতে গ্রেফতার ও ১০ জন র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। বাকি আমিনুল এখনো পলাতক রয়েছে বলে জানান মুফতি মাহমুদ।