• বৃহস্পতিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

র‌্যাব বিলুপ্ত-ডিজিএফআইয়ের লাগাম টানুন:জাতিসংঘ


প্রকাশিত: ৪:৪৩ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪ বার

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের অনুসন্ধানী দল।বুধবার জেনিভায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক ও অন্যরা।

 

বিশেষ প্রতিনিধি : জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনী, বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক সুশাসনের ক্ষেত্রে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়– ওএইচসিএইচআর। বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) কেবল সীমান্তরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরকে কেবল সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সুপারিশ রয়েছে।

ওএইচসিএইচআর বলেছে, “র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে বিলুপ্ত করুন এবং গুরুতর লঙ্ঘনের সাথে জড়িত নয় এমন কর্মীদের স্ব স্ব ইউনিটে ফিরিয়ে দিন।
বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের কাজগুলিকে সীমানা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা এবং ডিজিএফআইকে সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করুন এবং সেই অনুযায়ী তাদের সংস্থান এবং আইনি ক্ষমতা নির্দিষ্ট করুন।একইসঙ্গে, আনসার-ভিডিপির উপর ‘সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রোধ’ করে তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহায়ক হিসেবে কাজে লাগানোর সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

সশস্ত্র বাহিনীকে নিরাপত্তার কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণের সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শুধুমাত্র সীমিত সময়ের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাজে নিযুক্ত করা যেতে পারে। এ বিষয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি অধ্যাদেশ পাস করুন।ওএইচসিএইচআর বলছে, প্রতিবেদনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে তারা প্রস্তুত।

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের অনুসন্ধানী দল।বুধবার জেনিভায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক ও অন্যরা।অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আহ্বানে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনের তদন্ত দল।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান ররি মুনগোভেনের নেতৃত্বে ওই তদন্ত দলে মানবাধিকার অনুসন্ধানকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ছিল।প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে।আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়মাবলী এবং মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়- এমন বাংলাদেশের পুলিশ প্রবিধানগুলোও সংশোধন করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।

প্রতিবেদনে বলা হয়,এ সংশোধনীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বল প্রয়োগসহ, জনসমাগম ছত্রভঙ্গ করার জন্য ধাতব গুলি বা অন্যান্য প্রাণঘাতী গোলাবারুদ ব্যবহার সম্পর্কিত নির্দেশনা যা সম্ভাব্য মৃত্যু বা গুরুতর হুমকির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেবে।অবিলম্বে জনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসেবে শটগানের জন্য ধাতব শট ও গোলাবারুদ দিয়ে পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে সজ্জিত করার চর্চা বন্ধ করা। সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীকে বর্মভেদী গোলাবারুদ দেওয়া সীমিত করা।

কীভাবে কম প্রাণঘাতী কৌশল এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করে বিক্ষুব্ধ জনগণ শান্ত করা যায় এবং যোগাযোগমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে বলেছে জাতিসংঘ।২০০৭ সালের খসড়া পুলিশ অধ্যাদেশের ওপর ভিত্তি করে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের পাশাপাশি মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশগুলোকে আইন দিয়ে প্রতিস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সুপারিশে বলা হয়, সুশীল সমাজসহ সরকার, বিরোধী দল এবং স্বাধীন সদস্যদের নিয়ে একটি জাতীয় পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে, যার নেতৃত্বে একটি ন্যায্য স্বচ্ছ এবং যোগ্যতাভিত্তিক পুলিশ নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি এবং অপসারণ প্রক্রিয়া চালু করা যাবে।

স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের মাধ্যমে পুলিশ ওভারসাইট ইউনিটকে প্রতিস্থাপন করার সুপারিশ করে জাতিসংঘ বলেছে, এই কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশে পুলিশের চেইন অব কমান্ডের বাইরে থাকবে।র‌্যাব, ডিজিএফআই, বিজিবি ও পুলিশকে নিয়ে ওএইচসিএইচআর যেসব সুপারিশ করেছে, সে বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে ক্রম অবনতিশীল পরিস্থিতি এবং রাষ্ট্রীয় সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভকারীদের কিছু অংশ সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, যাদের বেশিরভাগ সরকারি ভবন, পরিবহন অবকাঠামো এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে।১৮ জুলাই সন্ধ্যায় সরকার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী জোরদার করার নির্দেশনা দেয়।

১৯ জুলাই থেকে বিক্ষোভ শেষ হওয়া পর্যন্ত, বিজিবি, র‌্যাব এবং পুলিশ ঢাকা এবং অন্যত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘নির্বিচারে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে’– এমন তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, “যার কারণে প্রতিবাদ কভার করতে আসা সাংবাদিকসহ অনেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় এবং আহত হয়।কিছু ক্ষেত্রে, নিরাপত্তা বাহিনী উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর খুব কাছ থেকে গুলি ছোড়ে। তবে পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী দিয়ে সহিংস উপায়ে চেষ্টা করেও বিক্ষোভকারীদের দমানো যায়নি, বরং বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ তাতে বেড়ে যায়।

এরপর ২০ জুলাই কারফিউ জারি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সৈন্যরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছোড়ে, যা বিক্ষোভকারীদের নিহত বা গুরুতর আহত হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি করেনি; কেবল একজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের কথা তুলে ধরে জাতিসংঘ বলেছে, “৩ অগাস্ট সেনাপ্রধানের উপস্থিতিতে হওয়া এক সভায় জুনিয়র সেনা অফিসাররা বেসামরিক বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ প্রত্যাখ্যানের জন্য চাপ দিতে থাকেন; বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে তারা অস্বীকৃতি জানান।

তা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের প্রতিরক্ষা সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে আরও সহিংস হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা পাল্টা আক্রমণের আশঙ্কা ছাড়াই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের অনুমতি পায়।২০ ও ২১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধের সময় পুলিশ ও র‌্যাবকে গুলি ছোড়ার ‘পূর্ণ ছাড়পত্র’ দেওয়ার কথা তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।সেখানে বলা হয়, “তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। জুলাইয়ের শেষের দিকে, সেনাবাহিনীও ব্যাপক অভিযানে অংশ নেয়, যেখানে পুলিশ এবং র‌্যাব গণবিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে নির্বিচারে বিপুল সংখ্যক মানুষকে গ্রেপ্তার করে।

সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য থেকে আরও জানা যায় যে ৫ অগাস্ট বিক্ষোভকারীরা যে ঢাকা মার্চের ডাক দেয়, তা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে থামানোর জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ একটি সরকারি পরিকল্পনা তৈরিতে অংশ নিয়েছিল। সেই পরিকল্পনা অনুসারে, পুলিশ অনেক বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করে, কিন্তু সেনাবাহিনী এবং বিজিবি বৃহৎ অর্থে নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল, ফলে বিক্ষোভকারীরা নির্বিঘ্নে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে সক্ষম হন।”

গোয়েন্দা সংস্থাও জড়িত ছিল-

গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আন্দোলনের দমানোর কীভাবে সম্পৃক্ত ছিল, তার একটি বর্ণনা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের কার্যালয়।
সেখানে বলা হয়, “ডিরেক্টরেট জেনারেল অব আর্মড ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) – এবং পুলিশের বিশেষ শাখা – গোয়েন্দা শাখা এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিটিসি) প্রতিবাদকারীদের দমনের নামে সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল।

তারা গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে নজরদারির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য এক সংস্থা থেকে আরেক সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করে এবং জুলাইয়ের শেষের দিকে ব্যাপকহারে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের পক্ষে প্রচারণা চালায়।গোয়েন্দা পুলিশ বন্দিদের কাছ থেকে তথ্য ও স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ‘নির্বিচারে আটক ও নির্যাতনের আশ্রয় নেয়’– এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটিটিসির সদর দপ্তর শিশুসহ নির্বিচারে আটকদের বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

গোয়েন্দা শাখা এবং ডিজিএফআই যৌথভাবে ছাত্রনেতাদের সেখানে অপহরণ করে এবং আটকে রেখে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আন্দোলন থেকে সরে আসতে চাপ দেয়।ডিজিএফআই, এনএসআই এবং গোয়েন্দা পুলিশের লোকজন আহতদের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা সেবা ‘বাধাগ্রস্ত করে’ বলেও তথ্য এসেছে প্রতিবেদনে।সেখানে বলা হয়, প্রায়শই হাসপাতালে রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ, আহত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং চিকিৎসাকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে।

এ পরিস্থিতি আইন সহায়তাকারী কর্তৃপক্ষ বা বিচার বিভাগ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, যাতে নির্বিচারে আটক বা নির্যাতনের চর্চা বন্ধ করা যায়। এ ধরনের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তার জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা হয়নি।এই ‘পদ্ধতিগত এবং সংগঠিত’ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলো ‘চাপা রাখার’ কাজও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো করত, সে কথাও এসেছে প্রতিবেদনে।

সেখানে বলা হয়েছে, “এনটিএমসি মন্ত্রণালয়সমূহের নির্দেশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের সাথে একত্রে কাজ করে, যাতে বিক্ষোভকারীরা তাদের কর্মসূচি সংগঠিত করতে ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবহারের সুযোগ না পায়।সহিংসতা সম্পর্কিত তথ্য ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আদান-প্রদানের জনগণের অধিকার সংকুচিত করা হয়।

একই সঙ্গে, গণবিক্ষোভ এবং তাদের সহিংস দমন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ এবং বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট না করার জন্য ডিজিএফআই, এনএসআই এবং র‌্যাব সংবাদ মাধ্যমে ওপর যে ‘চাপ’ দিয়েছিল, সে কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়।

“ডিজিএফআই পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভিকটিম, তাদের পরিবার এবং আইনজীবীদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য ভয় দেখাতে থাকে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্রের থেকে পাওয়া প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে পুলিশ, আধাসামরিক, সামরিক এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাথে জড়িতরা সহিংস উপাদানগুলোকে ব্যবহার করে সমন্বিত এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাজনৈতিক নেতৃত্বের পূর্ণ জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় এবং নির্দেশনার ভিত্তিতে এ সহিংসতা ঘটানো হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (আসাদুজ্জামান খান কামাল) নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা শাখার তৎপরতাগুলো সমন্বয় করতেন এবং নেতৃত্ব দিতেন। বাস্তবে কী ঘটছে– সে পরিস্থিতি নিয়ে তারা দুজনেই একাধিক সূত্র থেকে নিয়মিত প্রতিবেদন পেতেন।”

ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, “২১ জুলাই এবং অগাস্টের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেসব প্রতিবেদন সরবরাহ করতেন, সেখানে বিশেষভাবে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নিতে সাইট পরিদর্শনও করেন।

“তারপরও রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিজিবি, র‌্যাব, ডিজিএফআই, পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার পরিচালিত কার্যক্রমের অনুমোদন ও নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সরাসরি আদেশ এবং অন্যান্য নির্দেশনা জারি করে। এসব বাহিনী প্রতিবাদকারী ও সাধারণ নাগরিকদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা এবং নির্বিচারে আটকের মত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।”