র্যাব ছিল খুনি-এদের সমাজে রাখা যায়না: গুম কমিশন সদস্য নূর খান
লাবণ্য চৌধুরী : খুনি হিসেবে র্যাবকে সমাজে রাখা ঠিক হবে না বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সদস্য নূর খান লিটন। গুম সংক্রান্ত চিত্র প্রদশনী পরিদর্শন কালে তিনি বলেন, র্যাব বাতিলে সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে উল্লেখ করে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেছেন,‘এত ভয়াবহ ঘটনার পর একটি খুনি হিসেবে পরিচিত বাহিনীকে সমাজে রাখা ঠিক হবে না। এরা জনগণের কোনো সেবা করতে পারে না।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহী নগরীর লালনশাহ মুক্তমঞ্চে ‘জোরপূর্বক গুম, ক্রসফায়ার, পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদী জুলুমের ভুক্তভোগীদের গণজমায়েতে’ অংশ নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। নূর খান বলেন, পুলিশের কাজ পুলিশকে দিয়ে করানো উচিত, পুলিশের মধ্যে সেনাবাহিনী অংশগ্রহণ নতুন করে সমস্যা তৈরি করেছে। এ সময় গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন এবং নাবিলা ইদ্রিসও উপস্থিত ছিলেন।
গণজমায়েতের আয়োজন করে ভুক্তভোগীদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। গণজমায়েতে গুম, ক্রসফায়ার, পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অংশ নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। তারা এসব ন্যক্কারজনক ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. ফরিদ উদ্দিন খান, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসউদ, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবা হাবিবা, মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজিব, গুম বিষয়ক গবেষক মাহমুদ রাকিব প্রমুখ।’
একইস্থানে জাতিসংঘের সহযোগিতায় ‘গুম, জান ও জবান’ শিরোনামে চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন। আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
দেশের উন্নতির পথে ‘অস্থিতিশীল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে’ অন্যতম বাধা আখ্যা দিয়ে পুলিশের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে ‘এলিট ফোর্স’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় র্যাব৷ ওই বছরের ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের দিন রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পায় বাহিনীটি৷ এর মধ্য দিয়ে অপারেশনাল কাজ শুরু করে তারা৷
‘র্যাবের ওপরে যুক্তরাষ্ট্র’র স্যাংশন-
১৮ বছরের পথ চলায় কলেজ পড়ুয়া লিমনের পায়ে গুলি করা, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার পর এলিট ফোর্সটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর৷ওইদিন ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার’ অভিযোগ এনে র্যাব এবং সংস্থাটির কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র৷ মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতনকে ইঙ্গিত করেছে দেশটি৷
যদিও অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে বাংলাদেশ৷ বরং সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই৷ কিন্তু তারপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ধাক্কা খেয়েছে বাহিনীটি৷গত ৬ অক্টোবর গণভবনে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও র্যাব প্রসঙ্গে কথা বলেন সরকারপ্রধান৷
সেদিন তিনি বলেছেন, ‘র্যাবের ওপরে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যখন স্যাংশন দিল, আমার প্রশ্নটা হচ্ছে র্যাব সৃষ্টি করেছে কে? র্যাব সৃষ্টি তো আমেরিকার পরামর্শ৷ আমেরিকা র্যাব সৃষ্টি করার পরামর্শ দিয়েছে৷ আমেরিকা তাদের ট্রেনিং দেয়৷ তাদের অস্ত্রশস্ত্র, তাদের হেলিকপ্টার, এমনকি তাদের ডিজিটাল সিস্টেম, আইসিটি সিস্টেম-সবই আমেরিকার দেয়া৷