রোয়ানুর আঘাতে কার্গোডুবি-লণ্ডভণ্ড তজুমদ্দিন-পটুয়াখালীতে বাঁধ ভেঙ্গেছে-মহেষখালী প্লাবিত
জাতিরকন্ঠ রিপোর্ট : আবহাওয়া বার্তার নির্দেশনার আগেই আঘাত হানলো রোয়ানু।দুপুরে বরগুনা ও পটুয়াখালীর পর ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ আজ শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে।রোয়ানুর প্রভাবে মেঘনায় ২ কার্গো লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটেছে এবং এসব ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন ৫ জন।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ পড়ে ভোলার তজুমদ্দিনে রেখা বেগম (৩৫) ও আকরাম (১২) নামে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে তজুমদ্দিন উপজেলা শহরসহ আশপাশের গ্রামগুলো।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।রাঙ্গাবালী ছাড়াও দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার বিচ্ছিন্ন কয়েকটি বেড়িবাঁধ বিহীন চরে বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে সাগর উত্তাল হয়ে জোয়ারের পানি উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।শনিবার সকাল ৯টা থেকে জোয়ারের পানি উপজেলার কুতুবজুমের নয়া পাড়া, সোনাদিয়া, কাটাকালি, বড় দিয়া, পৌরসভার চরপাড়া, পশ্চিম চরপাড়া, হুনাইয়ার ছড়ায় পানি প্রবেশ করে ঘরবাড়ি পুকুর রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে সাগর উত্তাল হয়ে জোয়ারের পানি উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম এর আগে জাতিরকন্ঠকে বলেন, রোয়ানুর বাতাসে গতিবেগ ৮৮ কিলোমিটারের বেশি হবে না। এই বেগ ২০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার হলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকত। তা ছাড়া রোয়ানু শ্রীলঙ্কা থেকে এ পর্যন্ত প্রচুর বৃষ্টি ঝরিয়ে এসেছে।
বৃষ্টি হলে ঘূর্ণিঝড় এমনিতেই দুর্বল হয়ে যায়। তবে উপকূলীয় অঞ্চলে এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, রোয়ানু আজ সকাল নয়টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। একই সময়ে মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব ও কক্সবাজার থেকে ১৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। দমকা অথবা ঝোড়ো বাতাসের আকারে এটি ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভোলায় মেঘনায় ২ কার্গোডুবি, নিখোঁজ ৪
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে প্রবল বাতাসের তোড়ে ভোলার মেঘনা নদীতে বালুভর্তি দুইটি কার্গোডুবি হয়েছে।শনিবার বেলা ১১টার দিকে মেঘনা নদীর ভোলা সদরের ইলিশা এলাকায় একই জায়গায় কার্গো দুটি ডুবে যায়। এতে ওই দুই কার্গোতে থাকা চার শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন।
ভোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর খায়রুল কবির দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কার্গো দু’টিতে ভোলা শহর রক্ষা বাঁধের জিওব্যাগের বালু আনা হচ্ছিল।
তজুমদ্দিনসহ বহু গ্রাম লণ্ডভণ্ড
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ পড়ে ভোলার তজুমদ্দিনে রেখা বেগম (৩৫) ও আকরাম (১২) নামে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে তজুমদ্দিন উপজেলা শহরসহ আশপাশের গ্রামগুলো। কয়েক হাজার কাচা ঘরবাড়ি, দোকানপাট বিধ্বস্ত হয়েছে।
শশীগঞ্জ বাজারের অন্তত দুই শতাধিক দোকানপাট বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা ভেঙেছে। এছাড়া ভোলার চরাঞ্চল কয়েক ফুট পানিতে তলিয়ে গিয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। এখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে থেমে থেমে দমকা বাতাস বইছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু বাংলাদেশ উপকূলের দিকে আরও এগিয়ে এসেছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
পটুয়াখালীতে বাঁধ ভেঙে পানিবন্দী ৩ শত পরিবার
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ জানান, শনিবার সকালে বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার চরমনতাজ ইউনিয়নের বউবাজার গ্রাম, লঞ্চঘাট ও চরআন্ডা এলাকা প্লাবিত হয়।
রাঙ্গাবালী ছাড়াও দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার বিচ্ছিন্ন কয়েকটি বেড়িবাঁধ বিহীন চরে বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।এদিকে সকালে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে ঘর ভেঙে দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়ন লক্ষ্মীপুর গ্রামের নয়া বিবি (৫২) নামের এক নারী নিহত হন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম জানান।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলায় কয়েক’শ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। লক্ষ্মীপুর গ্রামেরই অন্তত ১৫টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।এছাড়া শনিবার রাত ৩টা পর্যন্ত মাত্র দেড় ঘণ্টায় ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ জানান।
তিনি বলেন, স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলসহ জেলার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে । সকাল থেকে ওই এলাকার লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।এদিকে কুয়াকাটা-সোনারচর সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে উত্তাল হওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।জেলা প্রশাসক একেএম শামিমুল হক ছিদ্দিকী বলেন, প্লাবিত হয়ে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের তালিকা পাঠাতে বলেছি।
মহেশখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত: আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে সাগর উত্তাল হয়ে জোয়ারের পানি উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।শনিবার সকাল ৯টা থেকে জোয়ারের পানি উপজেলার কুতুবজুমের নয়া পাড়া, সোনাদিয়া, কাটাকালি, বড় দিয়া, পৌরসভার চরপাড়া, পশ্চিম চরপাড়া, হুনাইয়ার ছড়ায় পানি প্রবেশ করে ঘরবাড়ি পুকুর রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।
কুতুবজুমের নয়া পাড়ার দক্ষিণে মহেশখালীর রক্ষাকারী বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশারাফ হোসেন খোকন ওই এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে।উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ প্রকৌশলী মো. হানিফ মিয়া জোয়ারের পানি প্লাবিত এলাকায় লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সর্তক বার্তা দিয়ে মাইকিং করছে।
চট্টগ্রামে বিমান উঠা-নামা বন্ধ
প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে দেশের উপকূল ও দক্ষিণাঞ্চলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে।শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবির বলেন, দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আজ সকালে বিমান ওঠানামা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখান থেকে ছাড়ার সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের সব কর্মকর্তা এবং অন্য বিমানবন্দরকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিমানবন্দরের স্টেশন কর্মকর্তা মোহম্মদউল্লাহ বলেন, সর্বশেষ দুবাইগামী একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বিমান উড়েছে। এর পর সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সকালে বাংলাদেশের বিমানের একটি ঢাকাগামী একটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।তিনি আরো জানান, গত শনিবার বিমানের দরজা খুলে যাওয়া বিমানটি মেরামত করা হয়েছে এবং এটি গতকাল বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আজ সকাল থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ আছে।