রোহিঙ্গা গণহত্যা-সূচি যাচ্ছেনা জাতিসংঘে
বিশেষ প্রতিনিধি : সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানোর কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তোপের মুখে পড়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন না মিয়ানমার নেত্রী অং সান সুচি।
আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিতব্য এ অধিবেশনে সুচির যোগ না দেয়ার বিষয়টি বুধবার তার দলের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, সুচির পরিবর্তে মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভান থিও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবেন।
গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছে। এ অভিযানে ব্যাপকসংখ্যক রোহিঙ্গা হত্যা-ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এ অভিযানকালে এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে এবং প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তিন লাখ ৭০ হাজার মানুষ।এর আগে গত বছরের অক্টোবর থেকে গত মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসব্যাপী আরেকটি সেনা অভিযানের মুখে চার শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত এবং বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় এক লাখ ৮৭ হাজার মানুষ।
এ অবস্থায় গত বছর থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়ন বন্ধ এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতিসহ মৌলিক অধিকার প্রদানে ব্যর্থতার জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন সুচি।বিশেষ করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের নেত্রী হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে সুচি সংখ্যালঘু মুসলমানদের সঙ্কট সমাধানে তার সরকারের প্রচেষ্টার পক্ষ নিয়ে কথা বলেছিলেন।
কিন্তু এর পরের মাস থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ জাতিগত নিধন অভিযান চললেও তা বন্ধে সুচির কোনো ভূমিকা নেই। বরং তিনি গণহত্যাকারী নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমকে সমর্থন করছেন।এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই সুচির কাছ থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কার কেড়ে নেয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের মুখোমুখি হতে এ বছর অং সান সুচি আর নিউইয়র্ক যাচ্ছেন না।তবে সুচির দল ন্যাশনার লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) মুখপাত্র অং শিন রয়টার্সকে বলেন, তিনি কখনোই সমালোচনার মুখোমুখি হতে বা সমস্যা মোকাবিলায় ভীত নন। সম্ভবত তিনি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।তবে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদ প্রকাশ্য বৈঠক না করায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো কঠোর সমালোচনা করে এলেও কূটনীতিকরা বলছেন- সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করলে তাতে ভেটো দেবে পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়া।