রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেবে সেনা সদস্যরা
স্টাফ রিপোর্টার : সেনাবাহিনীর হামলা-নির্যাতন-ধর্ষণের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে গত ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সোয়া চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই বিপুল শরণার্থীর ত্রাণ বণ্টনে সরকার সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম।
মন্ত্রী বলেন, রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর ২৫ আগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় চার লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে। এটা বিপুল সংখ্যা। এর জন্য কিছুটা ব্যবস্থাপনা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তাদের খাদ্য, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবা দেওয়া হচ্ছে। সামান্য যে অব্যবস্থাপনা আছে, তা দূর করা হবে বলে আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
‘বরাবর বিপদে পড়লে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়। সেই বিবেচনায় এবারও রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বণ্টনের জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আমরা নিজেরা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ দিচ্ছি। কিছু নিয়মকানুন মেনে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়। এ কারণে হয়তো একটু বিলম্ব হয়েছে।’
‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এখন ত্রাণ আসছে। এসব ত্রাণ গ্রহণ, বণ্টন ও ব্যবস্থাপনার কাজে সেনাবাহিনী সহায়তা করবে। তাঁরা অবকাঠামো উন্নয়নেও সহযোগিতা করবেন’, যোগ করেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একজন শরণার্থীও না খেয়ে মারা যাবেন না। এখন পর্যন্ত এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি।’
উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় দুই হাজার একর জায়গায় ১৪টি ক্যাম্পে নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য ১৪ হাজার শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। তাতেও সেনাবাহিনী সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রতিদিন ১৪ হাজার ইউনিট খাবার পানি বিতরণ করছে শরণার্থীদের মধ্যে।
গতকাল বুধবার পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৫৭৫ রোহিঙ্গাকে নিবন্ধন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ত্রাণমন্ত্রী। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, এত দিন ১০টি পয়েন্টে শরণার্থীদের নাম নিবন্ধনের কাজ চলছিল। আজ থেকে ৩০টি পয়েন্টে এই কাজ চলবে। প্রয়োজনে তা আরো বাড়ানো হবে।
ত্রাণমন্ত্রী আরো বলেন, শুরুর দিকে হয়তো বিশ্বের অনেক দেশ চুপচাপ ছিল। কিন্তু এখন তারা এই গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তারা রোহিঙ্গাদের অর্থ ও ত্রাণ দিয়ে সহযোগিতা করছে। বিশ্বের অনেক দেশ মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
মিয়ানমার সরকারের দাবি, গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা রাখাইন রাজ্যে দুই ডজনের বেশি পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে হামলা চালায়। এ সময় ১২ নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন। এর পরই বিদ্রোহীদের ধরার নামে মিয়ানমার সরকার ‘জাতিগত নিধন’ শুরু করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে শরণার্থী সংকটের শুরু হয়।
রোহিঙ্গারা রাখাইনে উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের নির্যাতনের শিকার, তাদের কোনো নাগরিকত্ব নেই, সরকার তাদের বাইরে থেকে আসা জনগোষ্ঠী হিসেবে দেখে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশহীন জনগোষ্ঠী এই রোহিঙ্গারা। রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও অভিযোগ করেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বিচারে পুরুষদের হত্যা করছে, নারীদের ধর্ষণ করছে। গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে সারা বিশ্বে সমালোচনার মুখে পড়ে মিয়ানমার সরকার।