রেলের সেই কালো বেড়াল-নয়া কেলেংকারি-
সাইফুল বারী মাসুম : রেলের সেই কালো বেড়াল এখনও বাঁচার চেষ্ঠায় কলকাঠি নাড়ছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রথমে ‘দায়মুক্তি’ দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বরখাস্ত জিএম ইউসুফ আলী মৃধার। আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্তের পর তিন মামলার সম্পূরক চার্জশিটে অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি। সম্পূরক এসব চার্জশিট দাখিলের অনুমোদনও দিয়েছে দুদক প্রধান কার্যালয়। চলতি জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিটগুলো জমা দেওয়া হবে।
সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া মামলাগুলো হলো- রেকর্ডকিপার দুর্নীতি মামলা, সিনিয়র ডাটা-এন্ট্রি কন্ট্রোলার দুর্নীতি মামলা ও কার্পেন্টার দুর্নীতি মামলা। প্রসঙ্গত, এর আগে সহকারী লোকোমাস্টার নিয়োগবিষয়ক দুর্নীতি মামলায়ও মৃধাকে বাদ দিয়ে দুদক চার্জশিট দিয়েছিল। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে পরে এ মামলায়ও তাকে চার্জশিটভুক্ত আসামি করেছে দুদক।
এ প্রসঙ্গে দুদক চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, ‘রেলের নিয়োগ দুর্নীতির তিন মামলায় মৃধাকে অভিযুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করতে প্রধান কার্যালয় অনুমোদন দিয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শিগগিরই আদালতে চার্জশিটগুলো দাখিল করবেন।’ মামলা তিনটির অধিকতর তদন্তকারী দুদক রাজশাহীর বিভাগীয় পরিচালক আবদুল আজিজ ভূঁইয়া বলেন, ‘তিনটি মামলার অধিকতর তদন্ত শেষ। দুদক থেকে মৃধাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন পেয়েছি। কিছুদিনের মধ্যে চট্টগ্রাম গিয়ে চার্জশিটগুলো জমা দেব।’
দুদক ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, রেলের পূর্বাঞ্চলের বরখাস্ত জিএম ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে রেকর্ডকিপার দুর্নীতি মামলা, সিনিয়র ডাটা-এন্ট্রি কন্ট্রোলার দুর্নীতি মামলা ও কার্পেন্টার দুর্নীতি মামলার সম্পূরক চার্জশিট দেওয়ার অনুমোদন দেন দুদক কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ (তদন্ত)। এরপর দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ কর্মকর্তা ঋৃতিক সাহা আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে লিখিত অনুমোদন দেন।
গত ১ ডিসেম্বর জারি করা অনুমোদনের এ পত্রটি চলতি সপ্তাহে দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ও চট্টগ্রাম আদালতে এসে পেঁৗছেছে। উল্লেখ্য, নগরীর কোতোয়ালি থানায় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি একটি মামলা (নং-১৭) এবং একই বছরের ১৭ এপ্রিল দুটি (নং-৩৪ ও ৩৫) দুর্নীতি মামলা হয়। এ মামলায় ঘষামাজা করে রেলওয়ের তিনটি পদে অনুত্তীর্ণদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে পূর্বাঞ্চলীয় রেলের জিএম (পরে বরখাস্ত) ইউসুফ আলী মৃধাসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। অপর আসামিরা হলেন- রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত), গোলাম কিবরিয়া, চন্দন কুমার রায়, হামিদ উল্লাহ ও গিয়াস উদ্দিন।
২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি এসব দুর্নীতি মামলা শুনানির পর দুদককে আরও তদন্তের নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. শাহেনূরের আদালত। মামলাগুলো থেকে মৃধাকে দায়মুক্তি (অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি) দিয়ে চার্জশিট দাখিল দিয়েছিল দুদক। এখনও আরও তিনটি মামলার অধিকতর তদন্ত চলছে। এগুলো হলো- গুডস সহকারী ও কোর্ট ইন্সপেক্টরসহ বিভিন্ন নিয়োগে অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুর্নীতি মামলা। দুদক সূত্র জানায়, এগুলোতেও মৃধাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে।
২০১২ সালের ৯ এপ্রিল তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাসায় যাওয়ার পথে টাকার বস্তাসহ আটক হন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন ওঠে। পরে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক। এরপর রেলে নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগে একের পর এক ১৩টি মামলা হয়।
এসব মামলার আসামি হয়ে ২০১২ সাল থেকে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন আলোচিত-সমালোচিত ইউসুফ আলী মৃধা। আত্মগোপন ছেড়ে ২০১৪ সালের ৩ মার্চ চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। জামিন আবেদন খারিজ হলে সেই দিন থেকে এখনও কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি।