রীড ফার্মা মামলায় সরকারি ধান্ধাবাজরা ফেঁসে যাচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার : ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে শিশুমৃত্যুর মামলায় সব আসামির খালাস পাওয়ার পেছনে কারও গাফিলতি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।ঔষধ প্রশাসনের মামলায় রীড ফার্মাসিউটিক্যােলসের সব আসামিকে খালাস দিয়ে আদালতের রায়ের পরদিন মঙ্গলবার সচিবালয়ে ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মন্ত্রী এই আশ্বাস দেন।
নাসিম বলেন, “একথা আমি বলতে পারি- কোনো সরকারি কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে যদি মামলা থেকে ওই ধরনের ব্যক্তিরা অব্যাহতি পেয়ে থাকে, অবশ্যই তাকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। কারণ এর সঙ্গে জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তাদের জীবনমরণের প্রশ্ন জড়িত রয়েছে।”
ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সাত বছর আগে রীড ফার্মাসিউটিক্যাললসের বিরুদ্ধে করা মামলায় সোমবার পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেয় আদালত।ঢাকার ঔষধ আদালতের বিচারক আতোয়ার রহমান এই রায় ঘোষণা করে বলেন, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার ‘অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে’ অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্য্র্থ হয়েছে।
রায় নিয়ে বিচারকের পর্যবেক্ষণ গণমাধ্যমে দেখে মঙ্গলবার ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সচিবালয়ে ডেকে নিয়ে তাদের বক্তব্য শোনার পাশাপাশি প্রতিবেদনের কপিও নেন মন্ত্রী।ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনায় মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে নাসিম বলেন, রায়ের কপি পাওয়ার পর রায় কীভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেব।
কোনোভাবেই যদি ওষুধ প্রশাসনের কোনো ব্যক্তি দায়ী হয়, দোষী সাব্যস্ত হয়, তার বিরুদ্ধে অবশ্যই যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।ভেজাল ওষুধ সেবনের পর নিহতদের পরিবার কেন ন্যায়বিচার পাবে না সেই প্রশ্ন তুলে নাসিম বলেন, “নিশ্চয় কেউ অপরাধ করেছেন নইলে কেন ২২টা শিশু মারা গেল? এটা হতে পারে না।
“যেখানে ২২টি শিশু মারা গেল নিশ্চয় সেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং জজ সাহেবের যে পর্যবেক্ষণ- কেউ যদি কোনোভাবে গাফিলতি করে থাকে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই।চিকিৎসক ও রোগীদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে অনেকগুলো আইন আছে সেগুলোকে একীভূত করে চিকিৎসা সেবা আইন করতে যাচ্ছি, এটি তাড়াতাড়িই চূড়ান্ত হবে।
২০০৯ সালের জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত রীড ফার্মার প্যারাসিটামল সিরাপ পানে সারাদেশে ২৮ শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠলে ১০ অগাস্ট ঢাকার ঔষধ আদালতে এ মামলা হয়।তৎকালীন ড্রাগ সুপার শফিকুল ইসলাম মামলা করার পর সেদিনই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম সঠিক নিয়ম মেনে জব্দ তালিকা এবং পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেননি। মামলা দায়েরের সময় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ ছিল, তা না নেওয়ায় তার অযোগ্যেতা ও অদক্ষতা প্রমাণিত হয়।”
মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, রীড ফার্মার প্যারাসিটামলে বিষাক্ত উপাদানের কারণে শিশু মৃত্যুোর ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলেন, ওই প্যারাসিটামলে ডাই ইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া যায়নি। তবে ওই ওষুধ ছিল নিম্নমানের।