রিহানির ফাঁসি মর্মান্তিক কাহিনী
শফিক আজিজি.ঢাকা:
‘আমি মাটির নিচে পচে শেষ হয়ে যেতে চাই না। চাই না আমার চোখ, হৃৎপিণ্ড ধূলিতে মিশে যাক। অনুনয় করছি, ফাঁসি হওয়ার পর যেন আমার চোখ, কিডনি, হৃৎপিণ্ড, হাড় বা অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যাদের শরীরে প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন, তাদের উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।’
এ শেষ ইচ্ছা খুনের দায়ে গত শনিবার ফাঁসি হওয়া ইরানি নারী ২৬ বছর বয়সী রিহানি জাবেরির। সাত বছর কারাগারে থাকার পর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে রিহানি তাঁর মায়ের কাছে রেকর্ড করে শেষ বার্তা পাঠান। সেখানেই আছে মানবসেবায় তাঁর অঙ্গদানের ইচ্ছার কথা। ইরানের অধিকারকর্মীরা এই বার্তা বিভিন্নভাবে বিলি করছেন।
ইরানের গোয়েন্দাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক একজন কর্মকর্তাকে হত্যার দায়ে রিহানির ফাঁসি দেওয়া হয়। রিহানি বলেছেন, ধর্ষণের চেষ্টা করায় ওই ব্যক্তিকে ছুরি মেরেছিলেন তিনি। অন্য কেউ তাঁকে হত্যা করেছে। কিন্তু তদন্তে সেই ব্যক্তির প্রতি কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, ছুরির আঘাত ছিল নিহত কর্মকর্তার পিঠে, যা রিহানির দাবির ওপর সংশয়ের ছায়া ফেলেছে।
শেষ বার্তায় রিহানি মাকে বলেছেন, ‘রাতের পর রাত ভেবেছি, আমাকে হত্যা করে শহরের এক কোনায় ফেলে দেওয়া হবে। কয়েক দিন পর পুলিশ লাশ ‘উদ্ধার’ করে মর্গে পাঠাবে। তোমাকে ডেকে পাঠাবে লাশ শনাক্ত করতে। সেখানে তুমি জানতে পারবে, তোমার মেয়ে ধর্ষণের শিকারও হয়েছে। কিন্তু পুলিশ অপরাধীদের খুঁজে পাবে না। কয়েক বছর সেই যন্ত্রণা বয়ে বেড়িয়ে তুমি একদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।’
মায়ের উদ্দেশে রিহানি বলেন, ‘কিন্তু গল্পটা তেমন হয়নি। তারা আমাকে শহরের কোনো কোণে ফেলে দেয়নি। এভিন কারাগারে কবরের মতো নিঃসঙ্গ ওয়ার্ডে পাঠিয়েছে। সবকিছু তুমি ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দাও, কোথাও অভিযোগ কোরো না। তুমি তো জানো মৃত্যুই সবকিছুর শেষ নয়।’
বিচার নিয়েও অসন্তুষ্টির কথা মাকে জানিয়েছেন রিহানি। বলেছেন, তাঁর প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে, তার বিচার একদিন হবে। সেটা হবে ‘সৃষ্টিকর্তার আদালতে’।
মায়ের উদ্দেশে সবশেষে বলেছেন রিহানি, ‘পরপারে শুধু তুমি আর আমি হব অভিযোগকারী। বাকিরা অভিযুক্ত। দেখি, সৃষ্টিকর্তা কী চান। মা, আমি তোমাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জড়িয়ে ধরে থাকতে চাই। তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’