রাষ্ট্রপতির সংলাপ-বিএনপি নিজেদের মন মত ইসি চায়?
বিশেষ প্রতিনিধি : পরবর্তী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ আজ রোববার শুরু হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বিকেল সাড়ে চারটায় বঙ্গভবনে যাবে।
পর্যায়ক্রমে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বসবেন রাষ্ট্রপতি।
বিএনপির সূত্র বলেছে, রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের প্রত্যাশা থাকবে সেই ধরনের নির্বাচন কমিশন গঠন, যার প্রতি সব দলের আস্থা থাকবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের আগে গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি বলেছে, খাঁচায় পোষা নয়, একটি মুক্ত নির্বাচন কমিশন চায় তারা।
তবে দলটির নেতারা বলছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপির আলোচনার ভিত্তি হবে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে খালেদা জিয়া যে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটি। এ লক্ষ্যে বিএনপি রাষ্ট্রপতিকে সার্চ কমিটিতে রাখতে কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের নামও প্রস্তাব করতে পারে।
এ সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার আগে আমরা নাম নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। রাষ্ট্রপতির আলোচনার উদ্যোগের মধ্যেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়টি সংবিধানে সুনির্দিষ্ট করা আছে।
সে আলোকেই রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, এটাই তাঁদের প্রত্যাশা। যদিও এ বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যদি শুধু শাসক দলের অনুগত লোকদের খোঁজেন, তাহলে তা সব দলের কাছে আস্থাশীল হবে না।
বিষয়টির উল্লেখ করে সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণের প্রত্যাশা একটি নিরপেক্ষ-স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, যা সরকারের সোনার খাঁচায় পোষা পাখি হবে না। এটা সত্যিকার অর্থেই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হবে, যে প্রতিষ্ঠান সরকারের রক্তচক্ষু অথবা তাদের অশুভ ইচ্ছাকে পরাজিত করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে।
বিএনপির পর ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করবে জাতীয় পার্টি। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, তাঁরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার বিষয়টি গুরুত্ব দেবেন। এ লক্ষ্যে দলের পক্ষ থেকে কমিশনকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়াসহ আরও কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘স্বচ্ছ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি যেন একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করেন, সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক অনুরোধ থাকবে।’ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হবে। ২০১৯ সালে নতুন কমিশনের অধীন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।
এর গঠন প্রক্রিয়া শুরুর আগে রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রথম ধাপে তিনি বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দলকে ডেকেছেন। অন্য দলগুলোর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টি, ২১ ডিসেম্বর এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও ২২ ডিসেম্বর জাসদকে (ইনু) ডাকা হয়েছে। সব দলকেই অনধিক ১০ জনের নাম পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয় বঙ্গভবন থেকে। আলোচনার জন্য এখনো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ডাকেননি রাষ্ট্রপতি।
বঙ্গভবনের একটি সূত্র জানায়, অন্যান্য দলের অনুরোধে শেষ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রতিনিধিদলের সংখ্যা ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৩ জন করা হয়েছে। সে জন্য টেলিফোনে বিএনপিকে ১৩ জনের নাম পাঠাতে বলা হয়েছে। গতকালই বিএনপি ১৩ সদস্যের নামের তালিকা বঙ্গভবনে পাঠিয়েছে।বিএনপির সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা শেষে বঙ্গভবন থেকে ফিরে দলের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করা হবে।
এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আলোচনার সারবস্তু আমরা গণমাধ্যমকে জানাব। তা কখন, কোথায় হবে এখনো ঠিক হয়নি।’তবে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় আনুষ্ঠানিক কোনো ব্রিফিং করবে না। তবে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আলোচনা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।