রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ধরা-খালেদা জিয়া
বিশেষ প্রতিবেদক: রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ফেঁসে গেলেন খালেদা জিয়া-। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমতি দিয়েছে। একজন আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত বৃহস্পতিবার এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রাতে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মমতাজউদ্দীন আহমেদের আবেদন বিবেচনায় এনে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা ওই আবেদনে বলা হয়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। এ ছাড়া জাতির পিতা ও আওয়ামী লীগ নিয়েও বিরূপ মন্তব্য করেছেন তিনি। এসব সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত বিষয়।
এ বিষয়ে নতুন করে বিতর্কের অবতারণা করায় তাঁর অপরাধ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে মনে করা হচ্ছে। খালেদা সংবিধান লঙ্ঘন করে কথা বলেছেন এবং রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ করেছেন। আইনি নোটিশ দেওয়ার পরও তিনি ক্ষমা চাননি বা বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি।জানতে চাইলে মমতাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমোদনের চিঠি এখন তাঁর হাতে। পুলিশের মহাপরিদর্শক ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটি রাজনৈতিক ও প্রতিহিংসামূলক মামলা। খালেদা জিয়ার দেওয়া ভাষণের একটি অংশের বিকৃত ব্যাখ্যা করে ক্ষমতাসীন মহল অপপ্রচার ও বিভিন্ন মতলবী কার্যক্রম শুরু করেছে। বিএনপি এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান দেওয়ার ব্যাপারটি কারও কাছ থেকে শিখতে হবে না। খালেদা জিয়াই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহের সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করেন।গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে।
তিনি বলেন, ‘আজকে বলা হয়, এত লাখ লোক শহীদ হয়েছে। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ না করে খালেদা জিয়া দাবি করেন, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না। খালেদা জিয়া একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সবাইকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে সত্যিকারে যারা সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করেছিল, বিএনপি তাদের বিচার চায়। কিন্তু সেটি হতে হবে আন্তর্জাতিক মানসম্মত, স্বচ্ছ উপায়ে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক সম্মান দেয়নি, এমন মন্তব্য করে খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নিজের ঘরে যুদ্ধাপরাধী পালছে, মন্ত্রী বানাচ্ছে।
খালেদা জিয়ার এসব বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায় একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন। বিভিন্ন সংগঠন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের কাছে অবস্থান নিয়ে তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায় এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।