রাতেই ফাঁসি মীর কাশেমের
শফিক রহমান/ মোস্তফা কামাল প্রধান : যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করতে সরকারের নির্বাহী আদেশ পৌঁছেছে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। আজ রাতেই ফাঁসি কার্যকর হবে। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেলার নাশির আহমেদ জাতিরকন্ঠকে বলেন, আজ শনিবার দুপুরের পর সরকারের আদেশ আমাদের হাতে পৌঁছেছে। একাত্তরের বদর নেতা কাসেমের ফাঁসি কখন কার্যকর হবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য তিনি দেননি। তবে দুপুরের পর থেকে কাশিমপুর কারাগার কমপ্লেক্সের বাইরের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশের পাশাপাশি কারাগারের ফটকে সারি বেঁধে অবস্থান নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক র্যাব সদস্য। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে কারাগারে ঢুকেছে ফায়ার সার্ভিসের একটা গাড়ি। পুলিশের একটি জলকামান আগের রাতেই কারাগারের ভেতরে নিয়ে রাখা হয়েছিল। কারাগারের আরপি চেকপোস্ট সংলগ্ন দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। উৎসুক জনতা ভিড় করেছে কারা ফটকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মীও সেখানে উপস্থিত আছেন।
ফাঁসি কার্যকরের সময় জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল কেবল বলেন, দেখেন, অপেক্ষা করেন। শেষবার দেখা করতে ছয়টি মাইক্রোবাসে করে কারাগারে যান মীর কাসেমের স্বজনরা।
জামায়াতের মজলিসে শুরা সদস্য মীর কাসেমের সঙ্গে শেষবার দেখা করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের ডাক পেয়ে বিকাল সাড়ে ৩টায় ছয়টি মাইক্রোবাসে করে কাসিমপুরে পৌঁছান তার পরিবারের সদস্যসহ ৪৫ জন আত্মীয়।তাদের মধ্যে মীর কাসেমের স্ত্রী, মেয়ে, পুত্রবধূসহ ৩৮ জনকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে বলে জেলার নাশির আহমেদ জানিয়েছেন।
এর আগে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পরিবারের শেষ সাক্ষাতের দিনই তাদের ফাঁসি কার্যকর করেছে কর্তৃপক্ষ। জামায়াতের মজলিসে শুরা সদস্য মীর কাসেমকে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৪ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চলতি বছর মার্চে আপিল বিভাগেও সেই রায় বহাল থাকায় তিনি রিভিউ আবেদন করেন।
আপিল বিভাগ গত মঙ্গলবার রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিলে কাসেমের মামলার সব বিচারিক প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটে।মীর কাসেমের প্রাণ বাঁচানোর শেষ সুযোগ ছিল কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। তিনি সেই সুযোগ নেবেন না বলে শুক্রবার জানিয়ে দিলে শুরু হয় সরকারের নির্বাহী আদেশের অপেক্ষা।
জেলার নাশির আহমদ জানান, মীর কাসেম আলীকে রাখা হয়েছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ৪০ নম্বর কনডেম সেলে। কারাগারের চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তাকে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হচ্ছে।
কারাগারের এক কর্মকর্তা জাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন, ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের দক্ষিণ পূর্ব কোণে ফাঁসির মঞ্চটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। মোম মাখানো দড়িতে আনুমানিক ওজনের বালির বস্তা বেঁধে প্রাথমিক মহড়াও দেওয়া হয়েছে।
জল্লাদ শাজাহানের নেতৃত্বে চারজন জল্লাদকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও ওই কর্মকর্তা জানান। এই জল্লাদ দল এর আগে যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী, কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করেছিল।