রাজাপুরের কৃতী সন্তান ওবায়দুলের অজানা অধ্যায়-
বিশেষ প্রতিনিধি : রাজাপুরের কৃতী সন্তান ওবায়দুলের অজানা অধ্যায় শুরু ১৯৬৬ সাল থেকে। ওইসময় ১৪ বছর বয়সী কুলছাত্র ওবায়দুল কাদের ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার সমর্থক। ছাত্রলীগের লাখো কর্মীর একজন। ৫০ বছর পর তিনিই হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। পাঁচ দশকে ছাত্রলীগ কর্মী থেকে ধাপে ধাপে তিনি এসেছেন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে।
রোববার আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। আগের কমিটিতে তিনি ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বেও আছেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এ নেতার নাম ঘোষণার পর সম্মেলনস্থলে তার সমর্থকরা বিপুল উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হন ওবায়দুল কাদের।
১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন ওবায়দুল কাদের। তার বাবা মোশাররফ হোসাইন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী। মাত্র ১৪ বছর বয়সে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন ওবায়দুল কাদের। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা উত্থাপন করেন। এর সমর্থনে রাজপথে সোচ্চার হয় বাংলার মানুষ। তাদেরই একজন ছিলেন ছাত্র ওবায়দুল কাদের।
স্কুলের পাঠ চুকিয়ে ওবায়দুল কাদের যখন কলেজছাত্র, তখন সারাদেশ আবারও উত্তাল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাবন্দি বঙ্গবন্ধু। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফার দাবি গণআন্দোলনে রূপ নেয়। নোয়াখালীতে ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা হিসেবে ওই আন্দোলনে অংশ নেন ওবায়দুল কাদের। মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে গড়া ওঠা মুজিব বাহিনীর কোম্পানীগঞ্জ থানা কমান্ডার হিসেবে সম্মুখসমরে অংশ নেন।
স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যুক্ত হন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দমন-পীড়নের মুখে পড়েন। কারাবন্দি হন ওবায়দুল কাদের। ১৯৭৬ সালে কারাগার থেকেই ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে পুনর্নির্বাচিত হন।
ছাত্রজীবন শেষে আওয়ামী লীগে যোগ দেন ওবায়দুল কাদের। নব্বয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন সক্রিয়। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে হেরে গেলেও রাজনীতিতে ছিলেন সরব। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় ক্রীড়া, যুব ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পান। দলের সংস্কৃতি ও শিক্ষা সম্পাদক হন।
২০০২ সালের ২৬ ডিসেস্বর আওয়ামী লীগের ১৭তম সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাবন্দি হন। ওই সময়ে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর কারণে সমালোচিত হন।
তবে ২০০৯ সালে ১৮তম কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন ওবায়দুল কাদের। ২০১২ সালের কাউন্সিলেও একই পদ পান। ২০১২ সালে দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রী হন ওবায়দুল কাদের। ২০১৪ সালে তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। পাশাপাশি তৃতীয় দফায় মন্ত্রী হন। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের আগে থেকেই তাকে ঘিরে গুঞ্জন চলছিল; রোববার দ্বিতীয় শীর্ষ পদে নির্বাচিত হওয়ার পর তা সত্য প্রমাণ হয়েছে।