রাজাকারের নাতি জঙ্গি তামিমের গোপন রাষ্ট্রদ্রোহীতা’র ছক ফাঁস
শফিক রহমান : রাজাকারের নাতি জঙ্গি নায়ক কানাডার তামিমের গোপন রাষ্ট্রদ্রোহীতা’র ছক ফাঁস হয়েছে। নারায়নগঞ্জে নিহত জঙ্গি নায়ক তামিম চৌধুরী ছিল ‘বাংলাদেশ খিলাফত প্রধান’। তার সাংগঠনিক নাম শায়খ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ। কানাডার পত্রিকা ন্যাশনাল পোস্টের এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী আইএসের কথিত ‘বাংলার খিলাফত দলের প্রধান’।
সূত্র জানায়, তামিম কানাডা থেকে বাংলাদেশে এসে নানা কায়দায় জঙ্গি পরিচালনা শুরু করেন। গুলশান হামলার ‘হোতা’ এই তামিম প্রায় তিন বছর আগে কানাডা থেকে দেশে আসেন। এরপর গত দুই বছরে জেএমবির বেশ কয়েকটি হত্যা ও হামলার ঘটনায় তার নাম উঠে আসে।
তবে গুলশান হামলার আগে তার ব্যাপারে বেশি কিছু জানতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।গত ১৩ এপ্রিল আইএসের কথিত মুখপত্র ‘দাবিক’-এর ১৪তম সংখ্যায় আবু ইব্রাহিম আল-হানিফের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। এতে জানানো হয়, কৌশলগত কারণে বাংলাদেশে শক্ত ঘাঁটি করতে চায় আইএস।
নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ার একটি বাড়িতে গড়ে ওঠা জঙ্গি আস্তানায় শনিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরী।গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার তদন্তে নেমে তার ব্যাপারে একের পর এক তথ্য পান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নিখোঁজ ১০ তরুণের তালিকাতেও তার নাম দেখা যায়। পুলিশ বলছে, নতুন করে সংগঠিত জেএমবির অন্যতম নেতা তামিম। তার নেতৃত্বেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে জঙ্গিরা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাকে আইএসের বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক বলে দাবি করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রাম সাদিমাপুরের প্রয়াত আবদুল মজিদ চৌধুরীর নাতি তামিম। আবদুল মজিদ চৌধুরী একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
তামিমের বাবা শফিক আহমেদ চৌধুরী জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি পরিবার নিয়ে কানাডায় চলে যান। পরিবারের সঙ্গে কানাডার উইন্ডসরে থাকতেন তামিম। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর তিনি ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে আসেন। এর পর থেকে নিখোঁজ।
দেশে ফেরার পর থেকেই তিনি জেএমবিকে নতুন করে সংগঠিত করতে শুরু করেন। জেএমবির নতুন এই ধারাটি হয়ে ওঠে অনেক বেশি শক্তিশালী ও ধ্বংসাত্মক। গত দুই বছরে ঢাকা, দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে জেএমবিকে হত্যা ও হামলার মিশনে দেখা যায়। এভাবে বেশ কয়েকটি ‘সফল’ অভিযানের পর তারা গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলার মতো বড় পরিকল্পনা করে।
কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় আহত অবস্থায় গ্রেফতার রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, জাহাজ বিল্ডিং নামে পরিচিত তাজ মঞ্জিলের আস্তানায় অন্য ‘বড় ভাই’দের পাশাপাশি নিয়মিত যেতেন তামিম আহমেদ চৌধুরী। অভিযানে নিহত জঙ্গিদের তিনি প্রশিক্ষণ দিতেন। আর্থিকভাবে সহায়তাও করতেন।
এদিকে পুলিশ তামিমকে জেএমবি নেতা বললেও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের বিভিন্ন প্রকাশনায় দাবি করা হয়, তিনি সংগঠনটির বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক। এর ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও তাকে আইএস সমন্বয়ক হিসেবে উল্লেখ করেছে।
কানাডার ন্যাশনাল পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী আইএসের কথিত ‘বাংলার খিলাফত দলের প্রধান’। তবে তার সাংগঠনিক নাম শায়খ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ। তিনি কানাডা থেকে বাংলাদেশে গেছেন।
এর আগে গত ২ আগস্ট পুলিশ সদরদফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক পলাতক তামিম চৌধুরী ও মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হককে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেন। ওই সময় আইজিপি বলেন, গুলশান হামলার সময় তামিম দেশেই ছিল। সে নিজেই জঙ্গিদের নিয়ে গুলশানে এসেছে। ওই জঙ্গিদের রিক্রুটও করেছে তামিম।