‘রাজনৈতিক অস্থিরতা-অনিশ্চয়তায় অর্থপাচার হচ্ছে’
বিশেষ প্রতিনিধি : দেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ না হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদ।
শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘অর্থপাচার: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ডায়ালগে তিনি এসব কথা বলেন। ডায়ালগটির আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।‘অর্থপাচার: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক ডায়ালগ বক্তব্য রাখছেন সাবেক গর্ভনর ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদ। ছবি মহুবার রহমান।
ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, দেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ না হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। কারণ সরকারকেই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরির জন্য নীতি-কৌশল, সুযোগ-সুবিধা করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে মূলত বিনিয়োগবাদ্ধব পরিবেশের অপ্রতুলতা রয়েছে। শতভাগ বিনিয়োগ পরিবেশ থাকলে অর্থপাচার হতো না। অনেকে অর্থপাচারের পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা অনিশ্চয়তার কথা বলেন।
এক্ষেত্রে গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে যে অর্থপাচার হয়েছে তা ২০০৭ সালের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের একটা মতপার্থক্য তৈরি হয়। এজন্য ওই সময় অর্থ দেশে না রেখে বিদেশে পাচার হয়েছে।
একই ঘটনা ২০১৪ সালেও ঘটেছে। ২০১৩ সালের তুলনায় ওই বছর ৩৫ শতাংশ বেশি অর্থপাচার হয়েছে। এর মূল কারণ ২০১৪ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। আরেক পক্ষ নির্বাচনটি ঠেকাতে চেয়েছিল। এই সংঘাত বা অস্তির পরিবেশে অর্থপাচার হওয়াটা স্বাভাবিক।
সাবেক এই গভর্নর বলেন, অর্থপাচার রোধের জন্য দেশে টাকা থাকলে নিরাপদে থাকবে এই মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে পাচারকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দেশে দুই ধরনের অপরাধের বিচার হয় না। এক স্বর্ণ চোরাচালান দুই ফরেন কারেনসি পাচার। অনেকেই ক্যাপিটেল অ্যাকাউন্ট লিবারালাইজেশনের কথা বলছেন। মনে হয় এটা করার এখন সময় এসেছে।
তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থেই মুদ্রা বিনিময় হারকে বাজারমুখী করতে হবে। সঠিকভাবে মুদ্রা বিনিময় হারকে বাজারের সাথে সমন্বয় করতে পারলে ছোটো খাটো পাচার হত না। মুদ্রার অতি মুল্যায়নের কারণে রেমিটেন্স কমছে ও অর্থ পাচার বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সমালোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, এখন সময় এসেছে প্রাইস কমিশন জাতীয় কিছু করার। এই কমিশন পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) নির্ধারণ করে দেবে।এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডি সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, ড. আকবর আলী খান, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমদ প্রমুখ।