রাজনীতি-পুরনো চেহারা-কনস্টেবল নিহতসহ ৬২ পুলিশ ১৭ সাংবাদিক আহত
ডেস্ক রিপোর্ট : সেই পুরনো চেহারায় রাজনীতি। ফের হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি জামায়াত। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে বলে বিএনপি অনুমতি নিলেও তারা কথা রাখেনি বলে জানালেন, ডিবি প্রধান হারুন। পুলিশ বলেছে, ২০১৩-১৪ সালের মতো বিএনপি-জামায়াত যেভাবে পুলিশকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছিল সেই একই কায়দায় এবারও হামলা চালিয়েছে। এবার ১৭ সাংবাদিক আহত হয়েছেন বিএনপি জামায়াতের হাতে।হামলায় আহত হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক সদস্য। এদের মধ্যে ৬২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ২২ জনকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে বিএনপির পিটুনিতে কনস্টেবল পারভেজ নিহত হয়েছেন। সম্পদের ক্ষতি হয়েছে কয়েক শত কোটি টাকার।
রাজধানীতে বিএনপি-আওয়ামী লীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই উত্তাপ ছিলো সারা দেশে। প্রধান দুই দল এবং তাদের জোটভূক্ত দলগুলোর বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ নিয়ে সতর্ক প্রহরায় ছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকাল রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সমাবেশের কার্যক্রম শুরু করে। এক পর্যায়ে দুপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বিএনপি কর্মীদের। দুপুর একটার পর সংঘর্ষের সূত্রপাত। যখন আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য গাজীপুর থেকে একটি বড় গাড়িবহর তেজগাঁওয়ের দিক থেকে এসে কাকরাইল মসজিদের সামনে দিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের দিকে যাচ্ছিলো।
বাসগুলোকে দেখে বিএনপির উপস্থিত নেতাকর্মীসহ যারা বিএনপির পক্ষে বা সরকার বিরোধীদের পক্ষের সমাবেশে ছিলেন তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং সেখান থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পরবর্তীতে বাসগুলো যখন চলে যায়- তখন পুলিশের সাথে তাদের বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তারা পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এরপর পুলিশ ও বিএনপি এবং বিরোধীদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ বক্সে আগুন দেয়। তারা জাজেস কমপ্লেক্সের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর করে এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মধ্যে বাসে আগুন দেন। এরপর পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। কাকরাইল মসজিদের সামনে থেকে শুরু করে বিএনপির পল্টন কার্যালয় পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ বিএনপির সব নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। পুলিশ এসময় প্রচুর টিয়ারশেল, গুলি ও সাউন্ড গেনেট ছুড়েছে।ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে বিভিন্ন ছোট ছোট গলিতে আশ্রয় নেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেখান থেকেই তাদের ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবসে হামলা চালায় বিএনপির কর্মীরা। আগুন ধরিয়ে দেয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে।সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। আহত হয়েছের প্রায় অর্ধ শতাধিক পুলিশ।
বিএনপির পিটুনিতে কনস্টেবল পারভেজ নিহত
রাজধানীর ফকিরাপুলে বিএনপি-জামায়াতের হামলায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। শনিবার ২৮শে অক্টোবর বিকেলে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত পুলিশ কনস্টেবলের নাম পারভেজ। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে।ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানান, নিহত পুলিশ সদস্যের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মারধরে তার ইউনিফর্ম ছিঁড়ে গেছে।ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানিয়েছেন, নিহত ওই পুলিশ সদস্য দৈনিক বাংলা মোড় এলাকায় দায়িত্বরত অবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন।বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের আরও ৪১জন সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। আহত পুলিশ সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
নয়াপল্টনের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কাকরাইল থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে তা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এসময় বিএনপি জামায়াতের টার্গেট ছিল পুলিশ ও সাংবাদিক। দুপুর দুইটার দিকে বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড় এলাকায় তিন দিক থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালায় বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটের নেতা-কর্মীরা। কালভার্ড মোড়, পুরানা পল্টন ও সেগুন বাগিচা— এই তিন দিক থেকে পুলিশকে আক্রমণ করে তারা। এক পর্যায়ে পুলিশ পানির ট্যাংক মোড়ে অবস্থান নিয়ে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। পাল্টা হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াত নেতা–কর্মীরা। বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়ে পুলিশ সদস্য আবদুর রাজ্জাককে পিটিয়ে জখম করা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে সাংবাদিকরাও বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের আক্রমণের শিকার হন। বিএনপি কর্মীরা পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আগুন দেওয়া হয় যানবাহনে।
পুলিশ বলছে, ২০১৩-১৪ সালের মতো বিএনপি-জামায়াত যেভাবে পুলিশকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছিল সেই একই কায়দায় এবারও হামলা চালিয়েছে। হামলায় আহত হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক সদস্য। এদের মধ্যে ৬২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ২২ জনকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক আলাউদ্দিন বলেন, ‘বেলা এগারো টার পর থেকে বিকাল চার টা পর্যন্ত ৪০ জন আহত হয়ে এসেছে। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, অনেকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, হাতে, পায়ে, মাথা, শরীরে বিভিন্ন জখম, কাটা জখমসহ বিভিন্ন ধরনের আহত হয়েছেন। বিকালে দিকে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে, এ অবস্থায় এক সাথে বেশি রোগী আসায় চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে।
১ ঘন্টায় ৩ বাসে আগুন
রাজধানীর কাকরাইল, মালিবাগ ও কমলাপুরে এক ঘণ্টার মধ্যে তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।প্রথমে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারে বলাকা পরিবহণের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। একই সময়ে কমলাপুরে বিআরটিসির একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, বিকালে মৌচাক ফ্লাইওভারে বলাকা বাসে ও কমলাপুরে বিআরটিসি বাসে আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছে। আগুনে বাস দুটি পুড়ে গেছে। তবে কিভাবে আগুন লেগেছে, তাৎক্ষণিকভাবে সেই তথ্য দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।অন্যদিকে বিকাল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে কাকরাইল মোড়ে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ডিএমপির রমনা থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, কাকরাইল মোড়ে একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা শুনেছি। কে বা কারা আগুন দিয়েছে, সেই তথ্য জানা যায়নি।পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে।
বিএনপি কথা রাখেনি-ডিবি প্রধান
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিএমপির ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরাই প্রথমে সরকারি স্থাপনায় হামলা করেছে। বিএনপি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে করার কথা দিয়েছিল। ডিএমপি কমিশনারের কাছ থেকে তারা এমন শর্তেই অনুমতি নিয়েছে। হঠাৎ করে বেলা ১২টার পর থেকে তারা প্রধান বিচারপতির বাড়ির ফটকে ও জাজেস কোয়ার্টারের সামনে (বিচারকদের বাসভবন) আক্রমণ করে। আইডিবি ভবনের সামনে দুটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে।
সমাবেশে পুলিশি হামলার অভিযোগ এনে রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।বেলা আড়াইটার দিকে বিএনপির নয়াপল্টনের সমাবেশের দুদিকে অবস্থান নেয় পুলিশ। নিক্ষেপ করা হয় বেশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল। এর পরপরই মির্জা ফখরুল স্টেজ থেকে বেলা ৩টা ১০ মিনিটে হরতালের ঘোষণা দেন। এরপর মঞ্চ থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা আসেন এবং সমাবেশস্থল থেকে বেরিয়ে যান।
বিএনপির অভিযোগ, পুলিশ কাকরাইল মোড় থেকে ধীরে ধীরে রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে ছুঁড়তে পল্টনের দিকে এগিয়ে যায়। একসময় মুহুর্মুহু রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে। বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও হরতালের ডাক দেওয়ার তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকও হরতালের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।