• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

`রাঙ্গার পায়ের তলায় মাটি নেই’


প্রকাশিত: ১০:১৮ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ১৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০০ বার

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

রংপুর ব্যুরো:    রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে ১৪৪ ধারা জারির পর এরশাদপন্থী নেতাকর্মীরা শাপলা চত্বরে এবং রাঙ্গাপন্থী নেতাকর্মীরা নগরীর পায়রাচত্বরে সমাবেশ করেছেন। এরশাদপন্থীদের সমাবেশে ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেলে নিক্ষেপের ঘটনায় নগরীতে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় এক সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

 রাঙ্গাপন্থী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিরোধ করতে বললেন এরশাদ

এদিকে এ ঘটনার পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ এক টেলিকনফারেন্সে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেয়া  বক্তব্যে বলেছেন, “তোমরা আসিফদের সাপোর্ট করো। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলো।”

বেলা ১২ টা ৪৫ মিনিটে সেখানে এরশাদ টেলিকনফারেন্সে বক্তব্যে বলেন, “তোমরা ভালো আছো। তোমরা আসিফদেরকে সাপোর্ট করো। আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। তোমরা ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলো।”

নতুন কমিটি অনুমোদন দেয়ায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে অভিনন্দন জানিয়ে এরশাদপন্থী এবং প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার দলীয় পদ পদবি ও কমিটি পুনবর্হালের দাবিতে রাঙ্গাপন্থীরা একই সময়ে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সমাবেশ ও বিক্ষোভের ডাক দিলে প্রশাসন শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে।

ফলে সকাল থেকেই এরশাদপন্থী নেতাকর্মীরা নগরীর সেনপাড়ায় এরশাদের পৈত্রিক নিবাস স্কাই ভিউ লাঙ্গল ভবনে এবং রাঙ্গাপন্থী নেতাকর্মীরা সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অবস্থান নেয়।

দুপুর সোয়া ১২ টায় এরশাদ অনুমোদিত কমিটির জেলা ও মহানগর কমিটি অভিনন্দন মিছিল নিয়ে ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড হয়ে শাপলা চত্বরে গিয়ে সমাবেশ করে।

সমাবেশ শুরুর এক মিনিট পরেই চত্বরের পশ্চিম পার্শ্বে মিস্টাঙ্গন বিল্ডিংয়ের নির্মানাধীন ভবন থেকে পরপর দুটি ককটেল হামলা হয় সমাবেশ স্থলে। শুরু হয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ।

এ সময় এরশাদপন্থী নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের ধাওয়া করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ককটেল হামলায় অনলাইন পোর্টাল বাংলা নিউজের রিপোর্টার সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, জাতীয় ছাত্রসমাজ নেতা আমিনুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি কর্মী সাবেক কাউন্সিলর বাটুয়া, শামীম, ফরহাদ, হীরা, নজরুল, রমজানসহ অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হন।

পুলিশ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার পর সেখানে সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, সদস্য সচিব সাবেক এমপি এইচএম শাহরিয়ার আসিফ, মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সদস্য সচিব এসএম ইয়াসির প্রমুখ।

এরপর মিছিলটি গ্র্যান্ড হোটেল মোড় হয়ে লাঙ্গল ভবনে যেতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পরে তারা কোচ স্ট্যান্ড হয়েই মিছিলটি লাঙ্গল ভবনে গিয়ে শেষ হয়।

মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, “জনসমর্থন বঞ্চিত রাঙ্গা তার পেটোয়া বাহিনী দিয়ে এরশাদভক্ত হাজার হাজার মানুষের ওপর ককটেল হামলা চালিয়েছে। এতে তার ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।” তিনি দাবি করেন, এই হামলা কাপুরোষিত। এর দ্বারা প্রমাণ হয়ে গেছে রাঙ্গার পায়ের তলায় মাটি নেই।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমরা আগেই প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়ে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে মাইকিংসহ প্রচারণা চালিয়েছি। কিন্তু আমাদের সমাবেশ বানচাল করার জন্যই রাঙ্গা ষড়যন্ত্র করে সেখানেই সমাবেশের ডাক দিয়েছে। রাঙ্গা প্রশাসনকে ব্যবহার করে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করিয়েছে।”

জাপার এই নেতা বলেন, “শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে আমি রাঙ্গাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, প্রয়োজনে ভেন্যু পরিবর্তন করে জনসমর্থন প্রদর্শনের জন্য।প্রশাসনকে বলেছিলাম, উভয়কে পৃথক পৃথক জায়গায় ভেুন্য ঠিক করে দিতে। কিন্তু প্রশাসন সেটি করে নি। উল্টো আমাদের সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।”

এদিকে শাপলা চত্ত্বরে এরশাদপন্থীদের সমাবেশ চলাকালেই সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির অফিস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পায়রা চত্বরে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়ে প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম পদ এবং রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি পুনর্বহালের দাবিতে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে।

সেখানে বক্তব্য দেন বিলুপ্ত জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুল ইসলাম, জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, সেক্রেটারি হাসানুজ্জামান নাজিম, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি শামীম সিদ্দিকী,  জাতীয় ছাত্র সমাজের জেলা সভাপতি আশরাফুল হক জবা, জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি রাজু আহমেদ, মহানগর যুব সংহতির সভাপতি ইউসুফ আহমেদ, মহিলা পার্টির রাবেয়া খাতুন ও রোজিনা বেগম প্রমুখ।

এ সময় রাঙ্গাপন্থী নেতারা ঘোষণা দেন, প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গার পদ পদবি এবং জেলা ও মহানগর কমিটি পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত মাঠে তারা মাঠে থাকবেন। প্রয়োজনে ঢাকায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও তারা অবস্থান গ্রহণ করবেন।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, রাঙ্গা ছাড়া রংপুরে কোনো জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব নেই। ষড়যন্ত্র করে মোস্তফা আসিফ ইয়াসিররা জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করার জন্য এরশাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে রংপুরে জাতীয় পার্টিকে রক্ষার জন্য তারা মাঠে থাকবেন।

বিলুপ্ত জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সামসুল ইসলাম জানান, আমরাই এরশাদপন্থী। বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরা নিজেরাই ককটেল ফাটিয়ে আমাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে।

কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল কাদের জিলানী নতুন বার্তাকে বলেন, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। এ ঘটনায় কাউকে আটক করাও হয় নি।  ঘটনাটি ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।

এরশাদ গত ১০ সেপ্টেম্বর পার্টির প্রেসিডিয়াম পদ থেকে অব্যাহতি দেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে। একই সঙ্গে রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন।

মূলত আগের কমিটি থেকে শুধু জেলা ও মহানগর সভাপতি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে বাদ দিতেই এরশাদের এই আয়োজন বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। নতুন করে মহানগর কমিটিতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে আহ্বায়ক ও এসএম ইয়াসিরকে সদস্য সচিব, সাবেক পৌর মেয়র একেএম আব্দুর রউফ মানিক ও সদ্য বিলুপ্ত মহানগর কমিটির সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন কাদেরীকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।

জেলাতে সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন মাস্টারকে আহ্বায়ক ও ভাতিজা সাবেক এমপি এইচএম শাহরিয়ার আসিফকে সদস্য সচিব এবং  সদ্যবিলুপ্ত জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টুকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।

  (লেখাটি পড়া হয়েছে ৪১৫ বার)