• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

রাইসির মৃত্যু নাশকতা! সন্দেহ ইসরায়েলী গোয়েন্দা’র ওপর’ও!


প্রকাশিত: ১১:৪৬ পিএম, ২০ মে ২৪ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৯ বার

 

লাবণ্য চৌধুরী : হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি কি মারা গেছেন নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে কোনো রাজনৈতিক চাল নাকি কোনো নাশকতা তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, রাইসির মৃত্যু নিছক হেলিকপ্টার ক্রাসে ঘটেছে বলে মেনে নেয়াটা কঠিন।

কারণ, রাইসি দেশে ছিলেন কট্টরপন্থি। ইসলামবিরোধী একটি চক্র তাকে ডিসপপুলার করার চেষ্টা করছিল।যদিও হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের কারণ হিসেবে সরকারি ভাষ্যে বৃষ্টি, কুয়াশাসহ খারাপ আবহাওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে ঠিকই ; কিন্তু এর পেছনে নাশকতা থাকতে পারে এমন গুঞ্জনও জোরালোভাবে আলোচনায় আছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছে, ইসরাইলের ওপর’ও ইঙ্গিত আছে! বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসা এবং ইরানের ভেতরে-বাইরের নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি থাকা রাইসির এমন মৃত্যুর ঘটনায় ইরানের ভেতরের শত্রু বা এমনকি ইসরায়েলের মতো বাইরের খেলোয়াড় বা ক্রীড়নকেরা যুক্ত কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে।

রাইসির মৃত্যুতে ইসরায়েলের সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা কতটুকু? ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈরিতার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ইরানি অনুমান করেছেন যে এ দূর্ঘটনার পেছনে ইসরায়েলের হাত থাকতে পারে। ইঙ্গিত আছে ইসরাইল গোয়েন্দা মোসাদের ওপরও। কাজেই নিছক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে মারা গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এমনটা মেনে নেয়াবিস্ময়করও বটে!! ৬৩ বছর বয়সী রাইসি তাঁর কট্টরপন্থী নীতি ও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খামেনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য বেশ পরিচিত ছিলেন।

১৯৮৮ সালে তৎকালীন ইরান সরকার হাজারো রাজনৈতিক বন্দীর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। সে সময় রাইসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। পরে তো তিনি দেশটির প্রেসিডেন্টই হলেন। তাঁর সময়ে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে অস্ত্র বানানোর পর্যায়ের কাছাকাছি নিয়ে যায় এবং ইসরায়েলের ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালানো হয়।

গতকাল রোববার ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাইসির অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ঘটে।রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা অনেক জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ দুর্ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ইরান যখন তার প্রেসিডেন্টকে হারানোয় শোকাচ্ছন্ন, তখন দেশটির ওপর অনিশ্চয়তার মেঘ ছড়িয়ে পড়েছে, যার প্রভাব পড়তে পারে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে।

প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু ইরানের অভ্যন্তরে ক্ষমতার বিরোধ ও সংকটের সূত্রপাতই করবে না, বরং এই অঞ্চলে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাবও ফেলবে। মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও সংঘাতের মধ্যে রাইসির মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের হঠাৎ অনুপস্থিতি ইরান এবং এর বাইরেও ক্ষমতার ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ ইসরায়েলের হাত আছে এমনটা মনে করছেন না। একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা মানে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বা বলা যায় এর জন্য ইরানকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা। উচ্চপদস্থ কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, ইসরায়েল বরং সামরিক বা পারমাণবিক অবস্থান বা ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর কৌশল নিয়ে থাকে।

ইকোনমিস্টের একটি প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে। দামেস্কে ইরানের একজন জেনারেলকে ইসরায়েলের হত্যা এবং পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাসহ দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে রাইসির মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলের হাত থাকার ধারণা জোরদার হয়েছে।তবে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানি স্বার্থের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালানোর সঙ্গে জড়িত হিসেবে বিবেচিত হলেও সংস্থাটি কখনো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে তাদের লক্ষ্যবস্তু বানায়নি।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য রাইসির মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলের হাত আছে বলে মনে করছেন না। একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা মানে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বা বলা যায় এর জন্য ইরানকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা। উচ্চপদস্থ কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, ইসরায়েল বরং সামরিক বা পারমাণবিক অবস্থান বা ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর কৌশল নিয়ে থাকে।

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাইসির মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলের যুক্ততা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ ইসরায়েল কখনো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করার দিকে যায়নি। এমন কিছু করতে যাওয়া মানে নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধ শুরু করা এবং ইরানের তরফে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পথ তৈরি করা।’

যাহোক, এমন একটি সময়ে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে, যা এই অঞ্চলের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনজুড়ে ইরানের প্রক্সি নেটওয়ার্ক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে। ইরানের নেতৃত্বের মধ্যে যেকোনো অস্থিরতা–সংঘাত বিস্তৃত করতে এই গোষ্ঠীগুলোকে উৎসাহিত করতে পারে।