• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

রহস্যজনক আত্মাহুতি টাইগারদের!! রুবেল ছাড়া সবাই ফ্যাকাশে?


প্রকাশিত: ১২:৫৫ এএম, ৩১ মে ১৭ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৮ বার

 
স্পোর্টস ডেস্ক রিপোর্টার : আত্মাহুতি, দায়িত্বজ্ঞানহীন শট, উইকেট বিলিয়ে দেয়া- বাংলাদেশের ইনিংসকে এমন 22আরো কিছু শব্দ দ্বারা ব্যাখা করা যেতে পারে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে যেই দলটি ৩৪১ রান করেছিল সেই দলটিই কি না ভারতের বিপক্ষে ২১ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে! যেন কোনো ‘জুজু’ পেয়ে বসেছে টিম বাংলাদেশকে। একের পর এক উইকেট পতনের মিছিলে যোগ দেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। শেষ পর্যন্ত ৮৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ভারতের কাছে হেরে যায় ২৪০ রানে।

লন্ডনের কেনিংটন ওভালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২৪ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে ভারত। সেটির পেছনে ছুটতে গিয়ে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় ২৩ ওভারে ৫ বলে ৮৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২৪ রান করেন অলরাউন্ডার মিরাজ। এছাড়া সানজামুল ১৮ এবং মুশফিকুর রহীম করেন ১৩ রান। ইমরুল কায়েস (৭), সৌম্য সরকার (২), সাব্বির রহমান (০), সাকিব আল হাসান (৭) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (০), মোসাদ্দেক হোসেন (০), রুবেল হোসেন (০) এবং তাসকিন আহমেদ ১ রানে অপরাজিত ছিলেন।

৩২৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই সাবধানী ছিলেন ইমরুল ও সৌম্য। তবে উমেশ যাদবের করা চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটের পেছনে দিনেশ কার্তিককে ক্যাচ দিয়ে সৌম্য ফিরে গেলে হোঁচট খায় বাংলাদেশ। যদিও আম্পয়ারের আউটের সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশি ওপেনার।

শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার আগে একই ওভারে বাংলাদেশকে ধাক্কা দেন উমেশ। তার করা ওভারের পঞ্চম বলে ইনসুইংগারে নাকাল হয়ে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন সাব্বির। ভুবনেশ্বর কুমারের করা পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে ইমরুল মিড অনে উমেশকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে টাইগাররা।

ভুবনেশ্বরের করা সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে বাউন্সে পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাকিব ফিরে গেলে হতশ্রী হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। বাংলাদেশের রান তখন ৪ উইকেটে ২১। দুই বল পর মাহমুদউল্লাহ উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে লজ্জার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। উমেশের করা পরের ওভারে মোসাদ্দেকও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার মিছিলে যোগ দেন। বাংলাদেশে রান তখন ৬ উইকেটে ২২।

বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন মুশফিক ও মিরাজ। এই দুজন ৫ ওভার নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন। হঠাৎ যেন ধৈর্যচ্যুতি ঘটে মুশির। মোহাম্মদ শামির করা ১৩তম ওভারের চতুর্থ বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে জাদেজাকে ক্যাচ দিয়ে মুশফিক সাজঘরে ফিরলে ব্যাকফুটেই থাকে বাংলাদেশ। এর কিছু সময় পরই বুমারার বলে উইকেটের পেছন ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মিরাজ। তবে ফেরা আগে করেন দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৪ রান।

এর আগে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান বিশ্রামে থাকা মাশরাফির পরিবর্তে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়া সাকিব আল হাসান। দিনেশ কার্তিক শিখ ধাওয়ান ও হার্দিক পান্ডিয়া দৃঢ়তায় নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২৪ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ভারত।

ভারতের হয়ে কার্তিক ৭৭ বলে ৮টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে সর্বোচ্চ ৯৪ রান করেন। এছাড়া ধাওয়ান ৬৭ বলে ৬০, পান্ডিয়া ৫৪ বলে ৮০ এবং রবীন্দ্র জাদেজা করেন ৩৬ বলে ৩২ রান।

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন রুবেল। এছাড়া সানজামুল ইসলাম দুটি এবং মোস্তাফিজ নেন একটি উইকেট।
প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৪১ রানের পাহাড় গড়ে জয়ের পথেই হাঁটছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ দিকের নাটকীয়তায় হেরে যায় মাশরাফির দল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মূল লড়াই শুরু হওয়ার আগে ভারতের কাছে হার বাংলাদেশকে বড় ধরনের ধাক্কাই দেয়।

অন্যদিকে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে বড় জয়ই পেয়েছিল ভারত। আগে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ড ভারতীয় বোলারদের তোপের মুখে পড়ে ১৮৯ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে ব্যাটিংয়ে ২৬ ওভারে ৩ উইকেট ১২৯ রান তোলে বিরাট কোহলির দল। বৃষ্টির কারণে খেলা আর শুরু করা সম্ভব না হওয়ায় ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে টিম ইন্ডিয়াকে ৪৫ রানে জয়ী ঘোষণা করা হয়। কিউইদের পর বাংলাদেশের বিপক্ষেও দুর্দান্ত জয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ‘এ’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশের জন্য কঠিন পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে। মাশরাফি বিন মুর্তজার দল স্বাগতিক ইংল্যান্ডের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হবে। বৃহস্পতিবার স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মিশন শুরু হবে।

অন্যদিকে ‘বি’ গ্রুপে ভারতকেও দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। কোহলিদের সামনে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দল। ফলে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে ‘বি’ গ্রুপেও।

বাংলাদেশ দল: মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন, তাসকিন আহমেদ, সানজামুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও শফিউল ইসলাম।

ভারতীয় একাদশ: বিরাট কোহলি, আজিঙ্কা রাহানে, শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, মহেন্দ্র সিং ধোনি, দিনেশ কার্তিক, হার্দিক পান্ডিয়া, কেদার যাদব, যুবরাজ সিং, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার ও উমেশ যাদব।