রত্ন পাথর আপনাকে বদলে দেবে-
জ্যোতিষরাজ লিটন দেওয়ান চিশতী : রত্ন-পাথরের ইতিহাস থেকে জানা যায় ভূত্বকে, ভূগর্ভে ও সমুদ্রগর্ভে সুনীল জলরাশির তলে বিভিন্ন প্রকার রত্ন-পাথর পাওয়া যায়।
রত্ন-পাথরের ইতিহাস থেকে জানা যায় ভূত্বকে, ভূগর্ভে ও সমুদ্রগর্ভে সুনীল জলরাশির তলে বিভিন্ন প্রকার রত্ন-পাথর পাওয়া যায়।অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে গ্রহ-নক্ষত্রের শুভাশুভ ক্রিয়া মানুয়ের জীবনে বিদ্যমান থাকলেও রত্ন দ্বারা কি তার প্রতিকার সম্ভব? বা রত্ন ধারণে কি উপকৃত হওয়া যায়?
এর উত্তরে বলা যেতে পারে যে, মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গ পরমাণুর সমন্বয়ে সৃষ্ট। সৌরমন্ডলের গ্রহগুলোও পরমাণুর সমষ্টি। আর বিভিন্ন প্রকার রত্নগুলো এমন সব পদার্থের সমন্বয়ে সৃষ্ট যার উপস্থিতি মানব দেহেও বিদ্যমান। বিভিন্ন প্রকার রত্ন সরাসরি মানব দেহের ত্বককে স্পর্শ করে শরীরের উপর ইলেকটোম্যাগনেটিক (Electro Magnetic) প্রভাব বিস্তার করে, মানব দেহের বিদ্যমান যে কোন পদার্থের অসামঞ্জস্যপূর্ণ উপসি’তির সামঞ্জস্য আনয়ন করে।
বিভিন্ন প্রকার রত্ন বিভিন্ন গ্রহের রশ্মি অতিমাত্রায় আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করতে পারে। তাই রত্ন ধারণ করে স্নায়ুর উপর বিশেষ বিশেষ গ্রহের রশ্মি যোগ বা বিয়োগ করে শক্তিশালী করা সম্ভব। ফলে স্নায়ুগুলি শক্তিশালী হবে ও নতুন চিন্তা চেতনায় জীবন প্রবাহের ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল ভাবে এগিয়ে নিবে। আলোক রশ্মি, বায়ুমন্ডল (Atmosphere) ভেদ করে পৃথিরীর ভূ’ভাগের উপর পতিত হয়। গ্রহদের যেমন নিজস্ব তেজ বিকিরণের ক্ষমতা আছে, প্রতিটি রত্মেরও তেমনি পৃথক পৃথক তেজ আহরণের ক্ষমতা আছে। সূর্য এবং গ্রহমন্ডল থেকে বেরিয়ে আসা এই আলোক রশ্মিই আমাদের উপর নানাভাবে কাজ করে।
ভু’গর্ভে বা সমুদ্র গর্ভে যে সকল রত্ন-পাথর সৃষ্টি হয় তাহাও ঐ সৌর রশ্মিরই রাসায়ণিক ক্রিয়ারফল। মানব দেহের উপর Cosmic Ray জধু এর প্রভাব বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত । সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি (Ultra-Violet Ray) ও অপরাপর রঙ বিভিন্ন প্রকার রত্ম-পাথর এবং এর আভ্যন্তরীণ প্রচ্ছন্ন শক্তির উপর পরোক্ষ ও প্রত্যেক্ষভাবে ক্রিয়াশীল হয়ে মানবদেহে সংক্রামিত বিভিন্ন প্রকার ব্যাধির প্রতিকার করতে পারে। উল্লেখ্য রত্ম গুলোতেও বিভিন্ন রঙ বিদ্যমান। রত্নগুলো হচ্ছে-হীরা, রুবী, পান্না, মুক্তা, গোমেদ, ক্যাটসআই, পোখরাজ, প্রবাল ইত্যাদি।
আরো জানা যায়, বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ সৌরজগৎ (Solar System) -কে স্পেকট্রোস্কোপ (Spactroscope) দিয়ে বিশ্লেষণ, পরিশীলন এবং অধুনা আবিষকৃত “কিরলিয়ান ফটো পদ্ধতি” দ্বারা যে ব্যাখ্যা পেয়েছেন, তার সাথে প্রাচীন জ্যোতিষশাস্ত্রবিদগণ(Astrologer) কর্তৃক বিশ্লেষিত জ্যোতিষ শাস্ত্রের বিভিন্ন তত্ত্বীয় ও ফলিত মতবাদ গুলোর মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy) আজ প্রমাণ করছে যে, গ্রহ নক্ষত্র ও নক্ষত্র পুঞ্জগুলোর প্রতিটির উজ্জ্বলতা (Lumination) অনুযায়ী পৃথক পৃথক রঙ বিদ্যমান যেমন আমাদের সূর্যের রঙ হচ্ছে হালকা কমলা, শুক্রের রঙ হচ্ছে ধবধবে সাদা আর উত্তর আকাশের অন্যতম উজ্জ্বলতম তারকা প্রক্সিমা সেন্টরাই (Proxima Centauri) এর রং হচ্ছে উজ্জ্বল নীল।
প্রাচীন জ্যোতিষবিগদগণ হাতের বিভিন্ন স্থানে বিবিধ গ্রহের অবস্থান ধরে সে স্থান গুলোকে বিবিধ রং এর প্রতিবিম্ব (Reflection) উল্লেখ করেছেন। আর বিভিন্ন প্রকার রত্ন-পাথরের রঙ যে ভিন্ন ভিন্ন তার সাথে গ্রহ ও নক্ষত্রের রঙ এর সাদৃশ্যও তাঁরা এভাবে পেয়েছেন। সুতরাং জ্যোতিষ বিজ্ঞানে রত্নের ব্যবহার অভ্রান্ত নয় বলেই মনে হয়।
প্রখ্যাত জেমোলজিষ্ট (Gemmologist) জেমোলজিক্যাল ইনষ্টিটিউট অব আমেরিকার সদস্য, জেমোলজিক্যাল এসোসিয়েশন অব গ্রেট বৃটেন-এর ফেলো এবং ইংরেজী নওরতন(Nowratan) পুস-কের লেখক এম, এফ, ইসলাম রত্ন-পাথর প্রসঙ্গে তাঁর গ্রনে’ মানবজীবনে রত্ন-পাথরের প্রভাব ও গুণাগুণ সম্পর্কে বলেন- “An International Currency; a cheerer of soul; a healer of diseases; a charm against enchantment, magic, evil spirits and jealousy; a guide and indicator of the wearer’s health; a protector of hunter against
wild beasts, insects, and snakes; to enhance charm and beauty, strength and stability in the fairsex as well as man; to increase concentration in meditation and prayer.”
তবে রত্ন-পাথরের যথাযথ প্রয়োগ কৌশল সম্পর্কে খুব অল্প সংখ্যক মানুষ অবহিত। একথা মনে রাখতে হবে যে, ভুল ঔষধ সেবনের কারণে বা প্রয়োজন ব্যতিত ঔষধ ব্যবহারে যেমন জীবননাশ বা ক্ষতি হতে পারে: তেমনি প্রয়োজন ছাড়া রত্ন ব্যবহার বা যথার্থ রত্নের ভুল ব্যবহারের কারণেও মারাত্বক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও প্রচুর। তাই রত্ন-পাথর ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ বা অভিজ্ঞ জ্যোতিষের পরামর্শ একান্ত কর্তব্য। ভুললে চলবেনা যে অণুর সমম্বয়েই রত্নের উৎপত্তি আর দ্রব্য গুণ অনস্বীকার্য।