• সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪

রতন টাটার প্রয়াণ-পিতৃহারা হলো ‘গোয়া’-‘স্প্রাইট’রা


প্রকাশিত: ৩:৫২ এএম, ১০ অক্টোবর ২৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩০ বার

 

 

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : না ফেরার দেশে চলে গেলেন ভারতের শীর্ষ শিল্পপতি এবং টাটা গ্রুপের কর্ণধার রতন টাটা মারা গেছেন। রতন টাটার প্রয়াণে আজ পিতৃহারা হলো ‘গোয়া’-‘স্প্রাইট’রা। মাঝে মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় করা তাঁর বিভিন্ন পোস্ট থেকে টের পাওয়া যায় যে, রতন টাটা পশুদের কতটা ভালবাসেন, খেয়াল রাখেন। টাটা গ্রুপের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টারে বিপথগামী কুকুরদের জন্য একটি ক্যানেল তৈরি করা হয়।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।বুধবার দিবাগত রাতে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন এক সংবাদ বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে। এই শিল্পপতিকে বয়সজনিত অসুস্থতার কারণে ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রোববার রাতে জানা যায় হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রতন টাটাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। তবে সোমবার সকালে এই শিল্পপতি নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার কারণে নিয়মমাফিক চেকআপের জন্য তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন।

তার মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, রতন টাটা ছিলেন একজন দূরদর্শী ব্যবসায়ী নেতা, একজন মমতাময়ী এবং অসাধারণ মানুষ ছিলেন। তিনি ভারতের অন্যতম প্রাচীন এবং অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে স্থিতিশীল নেতৃত্ব দিয়েছেন। একইসঙ্গে, তার অবদান বোর্ডরুম ছাড়িয়ে গেছে। তার নম্রতা, মানবিকতা এবং আমাদের সমাজকে আরও উন্নত করার প্রতিশ্রুতির জন্য অনেকের কাছে তিনি প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।

সমবেদনা জানিয়ে রাহুল গান্ধী বলেছেন, রতন টাটা একজন দূরদর্শী মানুষ ছিলেন। তিনি ব্যবসা এবং জনহিতকর উভয় ক্ষেত্রেই স্থায়ী চিহ্ন রেখে গেছেন।গৌতম আদানি এক্সে লিখেছেন, ভারত একজন স্বপ্নদর্শীকে হারাল, যিনি আধুনিক ভারতের পথকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। রতন টাটা শুধু একজন ব্যবসায়ী নেতা ছিলেন না, তিনি সততা, সহানুভূতি এবং বৃহত্তর ভালোর প্রতি অটল প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতের চেতনাকে মূর্ত করেছিলেন। তার মতো কিংবদন্তিরা কখনই হারিয়ে যায় না।

রতন টাটা সব সময় অম্লান হাসি মুখে থাকতেন আর সঙ্গে থাকত পোষ্য কুকুররা। টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রতন টাটার কুকুর প্রেম কারোর অজানা নয়। মাঝে মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় করা তাঁর বিভিন্ন পোস্ট থেকে টের পাওয়া যায় যে, রতন টাটা পশুদের কতটা ভালবাসেন, খেয়াল রাখেন। টাটা গ্রুপের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টারে বিপথগামী কুকুরদের জন্য একটি ক্যানেল তৈরি করা হয়। পোষ্যরা যে তাঁর কাছে কতটা আদরের, তা নাম নির্বাচনেই বোঝা সহজ।

রতন টাটার এক পোষ্যের নাম ‘গোয়া’। তাঁর সামাজিক মাধ্যমের এমন পোস্টে তার ছবি রয়েছে, তার সম্পর্কে লেখা রয়েছে, যাতে বোঝা যায় তিনি কতটা পশুপ্রেমিক ছিলেন। ‘গোয়া’ রতন টাটার সঙ্গে অফিসেও অনেকটাই সময় কাটাত। ‘হিউম্যান অফ বম্বে’ সংস্থার সিইও ক্যারিশ্মা মেহেতা ‘লিঙ্কন্ড ইনে’ তাঁর এক অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছিলেন। তিনি একটি ইন্টারভিউয়ের জন্য রতন টাটার সঙ্গে দেখা করতে মুম্বইয়ের অফিসে গিয়েছিলেন। সে সময় ‘গোয়া’ (রতন টাটার পোষ্য) ঘোরাফেরা করছিল। ‘গোয়া’কে দেখে ভয় পেয়েছিলেন তিনি। কারণ কুকুরের প্রতি তাঁর আগে থেকেই ভীতি ছিল।

ওই মহিলা তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, তিনি যে ভয় পেয়েছিলেন, তা তাঁর আচরণে বুঝতে পেরেছিলেন রতন টাকা। ‘গোয়া’র উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘ভালো ছেলের মতো চুপ করে বসো।’ তারপর ক্যারিশ্মা মেহেতা জানান, ৪০ মিনিটের মতো রতন টাটার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, ‘গোয়া’ ঠিক একই জায়গায় বসেছিল।

ইনস্টাগ্রামে রতন টাটার একাধিক তাঁর কুকুর-প্রীতির গল্প তুলে ধরে। রাস্তার কুকুরদের দত্তক নিতেন তিনি। যত্ন করে পুষতেন, সেবা করতেন। এমনকি, নিজের অফিসের সামনে তিনি রাস্তার কুকুরদের আদর করতে, তাও আবার মাটিতেও বসে পড়ে। এ কথা বলতেন তাঁর ঘনিষ্ঠরাই।

এরকমই একটা গল্প ‘স্প্রাইট’ নিয়ে। হ্যাঁ, সেও কুকুর। দুর্ঘটনায় তার পিছনের পা দুটি বাদ যায়। স্প্রাইটের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ছিল। তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন রতন টাটা। কুকুরটির পিছনের পায়ের জায়গায় লাগিয়ে দেওয়া হয় হুইল চেয়ারের মতো দুটি চাকা। যা পেয়ে আবার ছুটে বেড়াতে শুরু করে স্প্রাইট। সেই কুকুরটিকে দত্তক নেওয়ার জন্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি।

বর্ষাকালে কুকুর-বিড়ালদের কথা মাথায় রেখে গত বছরই একটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট করেছিলেন রতন টাটা। তিনি আবেদন করেছিলেন, বৃষ্টির মরশুমে চার চাকা স্টার্ট করার আগে অবশ্যই গাড়ির নীচে দেখে নেওয়া উচিত। আসলে বর্ষাকালে অনেক কুকুর, বিড়াল বৃষ্টি থেকে বাচতে গাড়ির নীচে আশ্রয় নেয়। তাদের যাতে আঘাত না লাগে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার ব্যাপারে পোস্ট করেন রতন টাটা।বুধবার তাঁর প্রয়াণে যেন ‘আস্তানা’ হারাল ‘গোয়া’, ‘স্প্রাইট’দের মতো বহু পোষ্য।

রতন টাটা ১৯৯১ সালে শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হন এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১০০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের এই প্রতিষ্ঠানের ইস্পাত থেকে সফটওয়্যার পর্যন্ত নানা ধরনের ব্যবসা রয়েছে। ১০০ বছরের বেশি সময় আগে তার প্রপিতামহ এই শিল্পপ্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন।