রংপুরে পুলিশের পিটুনিতে ব্যবসায়ী নিহত: উত্তেজনা
রংপুর . স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশের পিটুনিতে রংপুরে নুরন্নবী হোসেন (৩২) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার অভিযোগউঠেছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশকে প্রায় ২ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। শুক্রবার ভোর রাতে মহানগরীর মাহিগঞ্জ বীরভদ্র বালাটারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে পুলিশ পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
নুরন্নবী ওই এলাকার আব্দুর রশীদের ছেলে। নিহতের ভাই গোলজার হোসেন জানান শুক্রবার রাত সাড়ে ৩ টার দিকে কোতয়ালী থানার এসআই তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে একদল পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় নুরন্নবীকে আটক করে বেধড়ক পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।
পরে পুলিশ তার মরদেহ গাড়িতে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। নিহতের স্ত্রী আরজিনা বেগম জানান- তার স্বামী নুরন্নবী ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশের ব্যবসা করতেন। কিছুদিন থেকে তিনি ব্যবসায়িক কাজ থেকে বিরত আছেন। তবে স্বামীর বড়ভাই তোফাজ্জল ও ছোটভাই গোলজার বর্তমানে ওই ব্যবসা দেখাশোনা করেন। স্বামী ও তাদের ফাহিম (১৩) এবং নাইম (৭) নামে দুই ছেলেকে দেশে রেখে তিনি দুবাইতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। ৩ মাস আগে দেশে এসেছেন।
আসন্ন ঈদ-উল আযহার পর স্বামীকে নিয়ে দুবাই যাবার কথা ছিল তার। এর জন্য স্বামীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী করতে ব্যস্ত ছিলেন তারা। তিনি বলেন-গত মঙ্গলবার তার স্বামীসহ প্রথমে দিনাজপুর এবং ওই দিনেই বিকেলে ঢাকা চলে যান। পরে বৃহস্পতিবার বাড়িতে ফিরে আসেন।
এদিকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে শুক্রবার রাতে পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে নিরাপরাধ স্বামীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তিনি এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ন্যায় বিচার দাবি করেন। নিহত নুরন্নবীর বড় ভাই তোফাজ্জল হোসেন জানান-রাতে সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। এসময় পুলিশ বাড়িতে এসে তার ছোটভাই গোলজারকে এবং নুরন্নবীকে পেটালে ঘটনাস্থলেই নুরন্নবী মারা যায়।
এ ঘটনায় তিনি দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবি জানান। স্থানীয়রা জানান নুরন্নবীর মরদেহ মেডিকেলে নেয়ার সময় ওই এলাকার এক নারীকে গাড়িতে তুলে নেয় পুলিশ সদস্যরা। পরে শনিবার সকাল ৬টায় ওই নারীকে বাড়িতে পৌছানোর জন্য পুলিশ বালাটারীতে গেলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে।
খবর পেয়ে কোতয়ালী থানার ওসিসহ অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলে ২ ঘন্টা পর সকাল ৮ টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে ওঠে। এদিকে, দুপুরে রংপুর সিটি মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে কোতয়ালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম জাহিদুল ইসলাম বলেন-গত বৃহস্পতিবার কোতয়ালী থানায় দায়েরেকৃত মোটরসাইকেল চুরির মামলায় শহরের বাহারকাছনা তেলীটারী এলাকার রিপন ওরফে ওলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মোটরসাইকেল চুরির সাথে নুরন্নবীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর শুক্রবার রাতে অভিযানে যায় পুলিশ।
এসময় পুলিশের উপস্থিতির কারণে নুরন্নবী হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। তবে ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে বলেও তিনি জানান। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান-ওই এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) জাকির হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) আতাউর রহমান ও কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মনোজ কুমার রায়। নিহতের মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও পুলিশ সুপার জানান।