যৌন নিপিড়নের শিকার বিশ্ব সুন্দরী প্রিয়তির আর্তনাদ
প্রিয়া রহমান : শৈশবে চার বছর বয়সে বাসার কাজের লোকের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ‘মিস আর্থ’ খেতাবজয়ী বিশ্ব সুন্দরী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি।
চার থেকে সাত বছর বয়সের মধ্যেই ৫/৬ বার যৌন নিপীড়নের শিকার হন প্রিয়তি। কখনো পাশের বাসার খেলার সাথী ভাইয়ের কাছে, কোনো ডাক্তারের পর্দার আড়ালে, কোনোদিন গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে নিজের কাজিনের কাছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে নিজের এ দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা জানান প্রিয়তি। যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করতে এই তথ্য জানান তিনি।আয়ারল্যান্ডে বিমান চালনা পেশার সঙ্গে যুক্ত প্রিয়তি একজন সুপার মডেল ও বিশ্ব সুন্দরী। ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পড়াশোনা করতে ১৪ বছর আগে আয়ারল্যান্ডে পাড়ি জমান।
প্রিয়তি শখ থেকে মডেলিং শুরু করে আয়ারল্যান্ডের সুপার মডেলে পরিণত হন। ২০১৪ সালে ‘মিস আয়ারল্যান্ড’ খেতাব জয়ের সম্প্রতি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা ‘মিস আর্থ’ নির্বাচিত হন তিনি। নিচে প্রিয়তির স্টাটাসটি তুলে ধরা হলো-
চার বছর বয়সী একটা বাচ্চা যখন সেক্সুয়ালি অ্যাবইউজড হয়, যখন সে বুঝেই না অ্যাবিউজিং কি, আর যখন বুঝে তখন থেকে সারা জীবন কি ধরনের ট্রমার মধ্যে থাকতে পারে তার ধারণা আমার আছে, কেননা সেই মেয়েটি আমি, আপনাদের মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল।
হ্যাঁ, চার বছর বয়সে প্রথম বাসার কাজের লোকের কাছে সেক্সুয়ালি অ্যাবইউজড হই। খেলতে দিবে না বলে মাকে কখনো বলিনি, আর তখন বুঝিনি। আমার বয়স চার থেকে খুব সম্ভবত সাত বছরের মধ্যে সেক্সুয়ালি অ্যাবইউজড হয়েছি ৫/৬ বার। কখনো পাশের বাসার খেলার সাথী ভাইয়ের কাছে, কোনো দিন ভাইয়ের সামনে ডাক্তার সাহেব পর্দার আড়ালে, কোনোদিন গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে এক সাথে সব বাচ্চাদের ঘুমাতে গিয়ে নিজের কাজিনের কাছে।
কথাগুলো কখনো মায়ের সাথে শেয়ার করিনি যদি আমাকে আর খেলতে না দেয়। যদি কোনো দিন গ্রামের বাড়িতে না যেতে দেয়? যদি উল্টা আমাকে বকা দেয়? বড় হওয়ার পর থেকে ভাবতাম এতটুকুন বাচ্চা মেয়ে ছিলাম আর তার সাথে কত কিছুই না হয়ে গেল।
আজ কেন বলছি? গতকাল আমার এক পরিচিত ১২ বছরের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে তার নিজ মামার কাছে সেক্সুয়ালি অ্যাবইউজড হয়ে, তার মাকে সে বলেছিল, মা বিশ্বাস করেনি আর বলেছে চুপ করে থাকতে। কিন্তু আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। বিশ বছর আগে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অনেক পুরনো কিন্তু এই বিশ বছরে জাতি আরও সভ্য হওয়ার কথা কিন্তু দিন দিন ব্যাপারগুলো বাড়ছে আর হয়ে যাচ্ছে আরও অসভ্য এবং অসুস্থ। বাড়ছে প্রতিদিন ধর্ষণ।
একটা কথা মাথায় আসতেই আজ গুগলে সার্চ দিলাম ‘বাংলাদেশ সেক্সটয়েস’, সাইট এ গিয়ে দেখি বাচ্চাদের যৌনাঙ্গের সেক্স টয় অথবা রেপ্লিকা। আমি অবাক হলাম, আর সঙ্গে ভয়। তার মানে, এ ধরনের মন-মানসিকতার মানুষ আমাদের মধ্যেই ভদ্র মানুষ হিসেবে আছে আর তারা সেই মনোবাসনা পোষণ করছেন আর তাই ওই বাচ্চাদের যৌনাঙ্গের সেক্সটয়গুলো বাজারে আছে, আর তার মানে এইগুলোর ডিমান্ড আছে।
আমি বাচ্চাদের বাবা-মা অথবা গার্ডিয়ানদের বলবো, ট্রাস্ট নো ওয়ান (কাউকে বিশ্বাস করবেন না)। আপনার বাচ্চার সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করুন যাতে সে আপনার সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করে। আপনার বাচ্চাকে সর্বদা চোখে চোখে রাখুন, এমনকি কার সঙ্গে খেলছে, কোথায় খেলছে।
কারো বাসায় একা গিয়ে খেলতে দিবেন না। প্রয়োজনে আপনি যান আপনার সন্তানের সঙ্গে। কারো কোলে বসতে দিবেন না। আপনারা নিজেদের ভিতর আপনাদের সচেতনতা তৈরি করুন, অন্যদেরও বলুন। আমি এই ব্যাপারটা শুধুমাত্র ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া পর্যন্ত শেষ করতে চাই না। আমি এই বিষয়ে ব্যাপকভাবে সচেতনতা চাই, আর তার জন্য দরকার আপনাদের সহযোগিতা।
আমার জানা মতে, বাংলাদেশে শিশু যৌন নির্যাতনের কোনো যথাযোগ্য আইন নাই অথবা শাস্তির বিধান নাই, প্রধানমন্ত্রীর নিকট কিভাবে আবেদন করা যেতে পারে (যদি থেকে থাকে তাহলে আমাকে জানাবেন প্লিজ। কিন্তু ইউরোপে শিশু যৌন নিপীড়নকে অপরাধ গণ্য করা হয় এবং এজন্য কঠোর আইন আছে।
আমি জানি, দেশে এখন ধর্ষকদেরই ধরা বা শাস্তি হচ্ছে না কিন্তু শিশু যৌন নিপীড়নের যদি কোনো আইন না থাকে তাহলে ব্যাপারটা আরও ভয়াবহ।
আমি জানি আমার স্ট্যাটাসটি যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো কোনো না কোনোভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন কিন্তু লজ্জায়, সমাজের ভয়ে আমরা বলি না। না বলুন, কিন্তু অন্তত রুখে দাঁড়ান, সচেতনতা তৈরি করুন, সবাইকে জানান। একটি শিশু কখনো ভুলে না তার ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা, আমি ভুলিনি। আর যেন না ঘটে তার চেষ্টা করি। কীভাবে রিকভার করা যায় সেই চেষ্টা করি। আমাদের শিশুদের নিরাপদে রাখি।