যোগ্যতার মূল্যায়নে নয়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার
শফিক রহমান : যোগ্যতার মূল্যায়নে নতুন-মন্ত্রিপরিষদ সচিব হলেন কবির-বিন-আনোয়ার। তিনি বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হবেন। বর্তমান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এই মূল্যায়নে প্রশাসনে আশার আলো সৃষ্ঠি হয়েছে। জানা গেছে, কবির বিন আনোয়ার বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সপ্তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ থেকে তিনি সিনিয়র সচিব হিসেবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তিনি বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হবেন। কবির বিন আনোয়ার বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সপ্তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ থেকে তিনি সিনিয়র সচিব হিসেবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ২৮ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে যোগ দেন। এই পদে যোগদানের আগে তিনি সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পারিবারিক জীবন : কবির বিন আনোয়ার একজন ক্যারিয়ার সিভিল সার্ভেন্ট। তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সপ্তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা।তিনি ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আনোয়ার হোসেন রতু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী হওয়া সত্ত্বেও পেশাগত জীবনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
কবির বিন আনোয়ারের মা সৈয়দা ইসাবেলা ছিলেন ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের একজন অন্যতম সংগঠক। তিনি পেশাগত জীবনে শিক্ষকতা করতেন। সেই সঙ্গে তিনি রচনা করেছেন ২২টি বই। কবিরের মাতামহ সৈয়দা ইসহাক হোসাইন সিরাজী ছিলেন একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সংগীতজ্ঞ। তিনি বিখ্যাত লেখক ও কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ভাই।তার পিতামহ আব্দুস সামাদ মিয়া ছিলেন একজন আইনজীবী। তিনি তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।কবির বিন আনোয়ারের সহধর্মিণী তৌফিকা আহমেদ। এই দম্পতির এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছেন।
শিক্ষাজীবন : কবির বিন আনোয়ার তার স্কুল ও কলেজ জীবন সম্পন্ন করেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ, ঢাকা থেকে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আইন শিক্ষার অভিপ্রায়ে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
স্কুলে পড়া অবস্থায় ১৯৭৪ সালে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তিনি বয়েজ স্কাউটের কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হন। তৎপরবর্তী সময়ে তার শিক্ষাজীবনের সব স্তরে এবং চাকরি জীবনের সব কর্মস্থলে স্কাউটিং তথা নানাবিধ সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছেন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে জাতীয় স্কাউট সিরাজগঞ্জ এর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে স্বাস্থ্যবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ স্কাউটের উন্নয়নবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
কর্মজীবন : কবির বিন আনোয়ার ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি তার বর্ণিল ও সাফল্যমণ্ডিত দীর্ঘ পেশাগত জীবনে একাধারে মাঠ প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদে থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন।
মাঠ প্রশাসনের যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি কর্মরত ছিলেন তার মধ্যে সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অন্যতম। তা ছাড়া তিনি সহকারী সচিব হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি, হেগ, নেদারল্যান্ডসে, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে, উপসচিব হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে মহাপরিচালক পদে (প্রশাসন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্মরত ছিলেন।
২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি সরকারের সিনিয়র সচিব হিসেবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে : কবির বিন আনোয়ার নানাবিধ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেেশর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা, সেমিনার, কর্মশালা ও নেগোসিয়েশনে অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ সম্মেলন, ওআইসি সম্মেলন, কমনওয়েলথ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং পবিত্র হজ্ব পালনে সৌদি আরবে যান। এ ছাড়া তিনি ১৭টি দেশে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফরে সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন। তিনি সর্বমোট ৪২টি দেশ ভ্রমণ করেন।