যুদ্ধাপরাধ থেকে বাঁচতে অতি গোপনে যুক্তরাষ্ট্রে পালালেন ওসমান ফারুক
আসমা খন্দকার ; মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত শুরুর পর গোপনে দেশ ছেড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুক। ভারত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র চলে গেছেন তিনি।
বিএনপি সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছাড়েন ওসমান ফারুক। তার ভারতের ভিসা ছিল। বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছাড়তে গেলে বাধার সম্মুখীন বা গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই সীমান্তপথ বেছে নেন তিনি। ভারত থেকে পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চলে গেছেন বলেও জানায় সূত্র।
গত ৪ মে ড. ওসমান ফারুকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওইদিন প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক জানান, তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে মামলা করা হবে। সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, ওসমান ফারুক স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, এর পক্ষে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে।
তদন্ত সংস্থা দাবি করেন, কাগজপত্রে ওসমান ফারুক যুদ্ধাপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছেন তারা। সংস্থাটির দাবি, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ওসমান ফারুকসহ ১১ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছিলেন এবং স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। সেখানে একটি টর্চার সেলও ছিল। ওই তালিকা অনুযায়ী খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য ওসমান গণির ছেলে ড. ওসমান ফারুক মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার ইকোনমি অনুষদের রিডার ছিলেন। অন্য ১০ জনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মকর্তা ছিলেন।
বিদেশে অবস্থানরত ওসমান ফারুকের ভাই যুদ্ধাপরাধে ফাঁসি হয়ে যাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর পক্ষে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন বলেও জানান তদন্ত সংস্থা।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ড. ওসমান ফারুক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার এড়াতে বিএনপির হাইকমান্ডের পরামর্শেই দেশ ছাড়েন তিনি। আপাতত যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করবেন ওসমান ফারুক। সেখানে থেকে একদিকে গ্রেফতার এড়াবেন, অন্যদিকে দলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন বলে মনে করে দলটির হাইকমান্ড।
ওসমান ফারুক সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি ১৯৭১ সালে দেশে ছিলেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেন, ড. ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা হাস্যকর ও অবাস্তব। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করা হয়েছে।