‘যুদ্ধাপরাধীদের যারা লালন-পালন মদদ দিয়েছে তাদেরও বিচার হবে’
বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একাত্তরের গণহত্যাকারী, স্বাধীনতাবিরোধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের যারা লালন-পালন ও মদদ দিয়েছে, রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে, লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তাদের হাতে তুলে দিয়ে অপমান করেছে, তারাও সমান অপরাধী। তাই যুদ্ধাপরাধীদের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের মদদদাতাদেরও একদিন বিচার হবে। দেশবাসীর এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধভাবে রূখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বুধবার বিকালে রাজধানীর খামারবাড়িস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১০টি বছর সন্ধ্যায় কারফিউ দিয়ে দেশ চালানো হয়েছে। ওই সময় কিছু কথিত বুদ্ধিজীবী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীকে গণতন্ত্রের প্রবক্তা বানাতে উঠেপড়ে লেগেছিল। এরাই পেছন থেকে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল।
শহীদ বুদ্ধিজীবী ও লাখো শহীদদের রক্তের শপথ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা। ইনশাল্লাহ আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলবোই। শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না, বৃথা যেতে দেব না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতাসীনরা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। কিন্তু এই দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলে শহীদ বৃদ্ধিজীবীসহ একাত্তরের সকল শহীদদের রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলতেই থাকবে। কারণ এ বিচার শেষ হবার নয়। কাজেই যারা দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে- তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। কারণ এটা ন্যায়ের পথ। যেটা ন্যায় ও সত্য, তার জয় সবসময় হয়, সবসময় হবে। এটাই আমরা বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে যারা বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল তারা যে কত ভুল এবং তারা যে ব্যর্থ সেটাই আমাদের প্রমাণ করতে হবে। সেটা আমরা প্রমাণ করতে অন্তত কিছুটা হলেও সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে আরও করতে পারবো। আজকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বলবো, কোনো ত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। মাঝখানে একটা কালো মেঘ এসেছিলে, কিন্তু সেই মেঘটা সরে গেছে।
আশা করি, এই মেঘের ঘনঘটা আর কখনো ওভাবে আসবে না। এই দুর্যোগ দেশের মানুষের জীবনে কখনো আসবে না। আসলে দেশের মানুষই পারবে সেটা মোকাবেলা করতে। সেই চেতনায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, সেই চেতনায় মানুষকে উঠে দাঁড়াতে হবে। যেন কখনো আর কোনদিন কেউ যেন বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। সেভাবেই এদেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে। শহীদ রক্তের শপথ- আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে দেশকে গড়ে তুলবোই।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরাবতা পালন করা হয়। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত কলামিস্ট-সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক সিরাজুউদ্দীন হোসেনের পুত্র সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর ও শহীদ বুদ্ধিজীবী-চিকিত্সক ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা নুজহাত চৌধুরী শম্পা। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সিনিয়র নেতারা মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও কেউই বক্তব্য রাখেননি। দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ আলোচনা সভা পরিচালনা করেন।