যুদ্ধপরাধীদের বিচার নিয়ে কোন দেশের নেতিবাচক মন্তব্য কাম্য নয়-শাহরিয়ার
বিশেষ প্রতিবেদক: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো দেশের নেতিবাচক মন্তব্য গ্রহণযোগ্য হবে না।পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বিষয়ে বাংলাদেশ ‘কড়া প্রতিবাদ’ জানানোর পর সোমবার বিকেলে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু পাকিস্তান কেন, পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রের কাছ থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের, মানবতাবিরোধী বিচারের প্রশ্নে আমরা কোনো নেতিবাচক মন্তব্য গ্রহণ করব না।’একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর ‘গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ’ প্রকাশ করে পাকিস্তান সরকার।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে রোববার প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে আমরা লক্ষ্য করেছি যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এই ঘটনায় আমরা খুবই অসস্তুষ্ট।’একাত্তরে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শনিবার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “১৯৭১ সালের ঘটনাবলি (মহান মুক্তিযুদ্ধ) নিয়ে বাংলাদেশে যে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বিচার চলছে সে বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি এবং তা আগের মতো আবারও গুরুত্ব দিচ্ছি।’
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে রোববার রাতে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার দুপুরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে তাকে দেখা করতে বলা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তলবে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সোমবার দুপুর আড়াইটায় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলম। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে হাইকমিশনারকে বলা হয়, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিচার নিয়ে মন্তব্য করা নাক গলানোর শামিল। এটা দুঃখজনক।
এ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, ‘পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আমরা অত্যন্ত হতাশ। আগের বারও ভেবেছি, বিচারের রায় নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না। এবারও ভেবেছিলাম, তারা কোনো মন্তব্য করবে না। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, একমাত্র তারাই বিচারের রায় নিয়ে মন্তব্য করল। অন্য কোনো দেশ এ নিয়ে মন্তব্য করেনি।’পাকিস্তান ওই বিবৃতি দিয়ে ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ’ করেছে বলেও মনে করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই সমালোচনা করে আসছে পাকিস্তান সরকার। এর আগেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় কার্যকরের পর পাকিস্তান সরকার একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।