যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্ট রপ্তানি কমেছে উদ্বেগে বিজিএমইএ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি এক তৃতীয়াংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। এ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে ‘পোশাক শিল্পের সার্বিক অবস্থা’ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামগ্রিক পোশাক আমদানি আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ভ্যাল্যুতে কমেছে ২২ দশমিক ২৮ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে পরিমাণের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আমদানি ২৮ শতাংশ কমেছে। যেখানে বাংলাদেশ থেকে কমেছে ২৯ শতাংশ।
অর্থাৎ পরিমাণের দিক থেকে এই সাত মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি এক তৃতীয়াংশ কমেছে। আর একই সময়ে ইউরোপের বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। পাশাপাশি পরিমাণ অনুযায়ী সমগ্র বিশ্ব থেকে আমদানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, আমাদের প্রধান দুটি বাজার হলো উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ। এই বাজার দুইটিতে আমাদের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ হয়। এ বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে আমাদের শিল্পে। আমরা এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য বরাবরই বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার তৈরি ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছি। ২০১০ সাল থেকে আমরা ক্রমাগত এই কাজটি করে আসছি।
সর্বশেষ আমরা অস্ট্রেলিয়ায় দিনব্যাপী বাংলাদেশ অ্যাপারেল সামিট করেছি। সেখানে আমরা আমাদের শিল্পের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরেছি। আমরা আশা করছি, অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের রপ্তানিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে। আমরা আরও অনেক অপ্রচলিত বাজার নিয়ে কাজ করছি, যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরব এমনকি ইরাক। বর্তমান এই সংকটময় সময়ে নতুন বাজারে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি আমাদের সাহায্য করছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতি এক নজিরবিহীন সময় অতিক্রম করছে। শতাব্দীর ভয়াবহ বিপর্যয়, কোভিড মহামারির ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর ফলে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে উৎপাদনকারী বা ক্রেতা, আমরা যে অবস্থানেই থাকি না কেন, সবাই একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
মূলত জ্বালানি তেল ও খাদ্য পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাপী নজিরবিহীন যে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন উন্নত দেশগুলো সংকোচনশীল মুদ্রানীতি নিয়েছে। তারা ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছেন, যা ভোক্তাদের আয়-ব্যয় এবং পণ্যের চাহিদায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ক্রেতারা এখন পোশাক কিনতে ব্যয় কমিয়ে খাদ্য ও জ্বালানির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে আমাদের পণ্যের খুচরা বিক্রয় কমে গেছে। ফলে প্রধান বাজারগুলোর পোশাক আমদানি কমে এসেছে।
পোশাকখাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি এই বছরে পুনঃনির্ধারণের জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড এখন পর্যালোচনার জন্য কাজ করছেন। বোর্ড ইতোমধ্যে কয়েকটি সভা করেছেন এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন। তারা কারখানা পরিদর্শন করে শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। ধারণা করছি এবছর শেষ হওয়ার আগেই একটি নতুন ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হবে। এর ফলে আমাদের খরচ কিন্তু আরও বাড়বে।