যারা বিরোধিতা করছে তাদের অনেকে রামপাল যায়নি:হাসিনা
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র পরিবেশ বান্ধব। যারা এ বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে বিরোধিতা করছে খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের অনেকেই রামপাল যায়নি। তারা মানুষের কথা ভাবছে না। কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুত্ কেন্দ্র সুন্দরবনে নয়, রামপালেই হচ্ছে।
এই বিদ্যুত কেন্দ্রের ছাই সিমেন্ট কারখানাগুলো নিয়ে যাবে, এর চিমনি সবচেয়ে উঁচু করে নির্মাণ করা হবে। এর জন্য কয়লা আনা হবে কাভার্ড গাড়িতে যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) ৫৭তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দেশের উন্নয়নে প্রকৌশলীদের ব্যাপক ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে জমির পরিমাণ সীমিত। জমি নষ্ট না করে পরিবেশ ও জনবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে প্রকৌশলী সমাজকে। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এদেশের মানুষ সব সময় মাথা উঁচু করে চলবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথেই দেশের উন্নয়ন সাধন করবে। তিনি বলেন, জনগণের ভোটে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসলে গত ৮ বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ন রাখা হবে। বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রকৌশলীদের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি সচল রাখা ও দ্রুত কার্যকরের দায়িত্ব প্রকৌশলীদের ওপর বর্তায়। কাজেই জাতির পিতার উন্নয়ন আদর্শ বাস্তবায়নে দেশের মানুষের সঙ্গে তারাও অন্যতম অংশীদার।
তিনি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি পানি ও বিদ্যুতের মতো অপরিহার্য উপাদানের যাতে অপচয় না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করে তোলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। দেশের সকল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখনো ইট পোড়াচ্ছি, অথচ বিশ্বে এখন নতুন প্রযুক্তিতে হোলো ব্লক তৈরি করছে। দেশের মোটা বালু দিয়ে তা এখানেই তৈরি সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশে দরিদ্রদের জন্য আবাসন এবং বহুতল ভবন নির্মাণে তার সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, লক্ষ করা গেছে দেশে নির্মিত অনেক ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টে আলো-বাতাস খেলা করে না, পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। তিনি এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত ঘর-বাড়ি তৈরির জন্যও প্রকৌশলীদের পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে প্রযুক্তি ও বিশেষায়িত শিক্ষা নির্ভর উচ্চ শিক্ষার বিকাশে তার সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে বলেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এমন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে চাই যেখান থেকে পাস করে আমাদের দেশের সন্তানরা দেশে-বিদেশে চাকরি পাবে।
এই লক্ষ্যে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি স্থাপনে তার সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, সমুদ্র জয়ের সুফল শীঘ্রই ঘরে তোলা হবে। বঙ্গোপসাগরে একটি সি-অ্যাকুরিয়াম নির্মাণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু চালু হবে। তিনি তার সরকারের উদ্যোগে জাতীয় উন্নয়নে ই-গভর্নেন্স চালু, দেশকে খাদ্য উত্পাদনে অগ্রসর করে খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত করা, ২০২১ সালের মধ্যে দেশে দেশে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের পরিকল্পনা, বিদ্যুত্ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণ, সহ-সামাজিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অগ্রসরমাণ। বাংলাদেশের জিডিপি এখন ৭ দশমিক ১ ভাগ। দারিদ্র্য নেমে এসেছে ২২ দশমিক ৪ ভাগে। এখন শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ। মানুষের গড় আয়ুু ৭১ বছর। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে ১২৩ শতাংশ। বিদ্যুত উত্পাদন ক্ষমতা এখন ১৫ হাজার মেগাওয়াট। দেশে এখন ৭৮ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত্ পাচ্ছে। দেশে বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ বিলিয়ন ডলার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে আইইবি পদক পরিয়ে দেন বুয়েট শিক্ষক অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান ও মেজর জেনারেল সাঈদ মো. মাসুদ পিইঞ্জকে। তিনি এএমআইই ও পিইঞ্জ প্রাপ্ত প্রকৌশলীদের স্বীকৃতি সনদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইইবির প্রেসিডেন্ট মো. কবির আহমেদ ভূঞা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইবি’র জেনারেল সেক্রেটারি মো. আবদুস সবুর, আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান সাদেক মোহাম্মদ চৌধুরী, আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সেক্রেটারি প্রবীর কুমার সেন। আমন্ত্রিত অতিথিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, এমএ লতিফ এমপি, প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নদভি এমপি, দিদারুল আলম এমপি, চট্টগ্রাম মহানগরী আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।