যাবজ্জীবন দণ্ড কি ৩০ বছর নাকি আমৃত্যু কারাদণ্ড?
বিশেষ প্রতিনিধি : যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কি ৩০ বছরের কারাদণ্ড নাকি, আমৃত্যু কারাদণ্ড—এ নিয়ে যে সৃষ্ট অস্পষ্টতা দূর করতে বিষয়টির রিভিউ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বেশ কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ। তাঁরা মনে করছেন, এ নিয়ে কখনো কোনো অস্পষ্টতা ছিল না। প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয়কে এখন বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছরের কারাদণ্ড। দেড় শ বছর থেকে চলে আসা একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়।
আজ শনিবার সকালে ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) মিলনায়তনে ‘ইমপ্রিজনমেন্ট ফর লাইফ অ্যাজ ইমপ্রিজনমেন্ট টিল ডেথ: রিফ্লেকশনস অন জুরিসপ্রুডেনশিয়াল ইস্যুজ’ শিরোনামে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ একটি হত্যা মামলায় আপিল খারিজ করে রায় দেন। সেখানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন। একই সঙ্গে এই যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাবাস বলে অভিমত দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপরই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কি ৩০ বছরের কারাদণ্ড, নাকি আমৃত্যু কারাদণ্ড—এ নিয়ে অস্পষ্টতা দেখা দেয়।
আজকের সভার সভাপতি সাবেক আইনসচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল বলেন, সারা বিশ্ব ও বাংলাদেশে যাবজ্জীবন ধারণাটি স্পষ্ট। হঠাৎ বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি করা হলো। আপিল বিভাগ সম্প্রতি একটি রায় দিয়েছেন এবং যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাবাস বলে উল্লেখ করেছেন। এর ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ ও অ্যাটর্নি জেনারেলও তো কখনো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিয়ে দ্বিধায় ভোগেনি। তাহলে এখন কেন এই বিভ্রান্তি?
হাবিবুল আওয়াল বলেন, ‘যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত যেসব আসামি কারাগারে থাকা অবস্থায় রেমিসন (সাজা হ্রাস) পান, তাঁদের কী হবে? এ ক্ষেত্রে ৩০ বছর হিসাবটি সঠিক। কারণ, কেউ যখন ভালো কাজ করেন, সে অনুসারে তাঁর সাজা মাফ করে জেল কর্তৃপক্ষ।’ তিনি বলেন, আমৃত্যু কারাদণ্ড হলে এই মানুষগুলো যখন বার্ধক্যে পৌঁছাবেন, তখন তাঁদের দেখভাল করার লোক থেকে শুরু করে আরও অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি হবে। সেসব সমাধান করবে কে? এই বিষয়টি নিয়ে রিভিউ হওয়া প্রয়োজন।
সভায় যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান ও ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের অধ্যাপক মোকাররম হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশের যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলো একে অন্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নাকি পরিপূরক হয়ে কাজ করছে, বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। এ বিষয়গুলো নিয়ে আরও কাজ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
বিলিয়ার পরিচালক শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমার মনে হয় এই বিষয়টি (যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড) রিভিউ হওয়া দরকার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান তাঁর উপস্থাপনায় দেখিয়েছেন, বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে ভারতের আইন অনুসরণ করলেও কিছু ক্ষেত্রে তা করছে না। না করা কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু সেটি যখন সাংঘর্ষিক হয়, তখন সমস্যা। ভারতেও আমৃত্যু মানে ৩০ বছরের কারাবাস। এ ছাড়া বাংলাদেশে একই রায়ের ওপর ভিন্ন ভিন্ন পর্যবেক্ষণ অনেক সময় দ্বিধায় ফেলে দেয়।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক রেদওয়ানুল হক কিছু অস্পষ্টতা নিয়ে তাঁর বক্তব্য দেন। আলোচনা শেষে অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।