• রোববার , ৫ জানুয়ারী ২০২৫

যমুনা লাইফে মহাজালিয়াত-উপদেষ্টা নাহিদকে ব্ল্যাকমেইল কামরুলের


প্রকাশিত: ৩:১০ এএম, ২ জানুয়ারী ২৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯ বার

 

লাবণ্য চৌধুরী : অবশেষে যমুনা লাইফে’র মহাজালিয়াত চিহ্নিত হয়েছে। একাধিক জালিয়াতি করে ওই জালিয়াত টিকে ছিল ইন্সুরেন্স সেক্টরে। কিন্তু এবার ধরা পড়েছে। অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদকে রীতিমত ব্ল্যাকমেইল করে স্বাক্ষর জাল করেছিল সেই মহাজালিয়াত কামরুল। সরেজমিনে জানা গেছে, শিক্ষাসনদ ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে কামরুল হাসান খন্দকারের নিয়োগ নবায়নের আবেদন নামঞ্জুর করেছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

এ অবস্থায় উপদেষ্টা নাহিদকে ব্ল্যাকমেইল করে সে। স্বাক্ষর জালিয়াতির আশ্রয় নেয় জালিয়াত কামরুল হাসান খন্দকার। সিইও পদ নবায়ন করতে আইডিআরএ’র কাছে তিনি নতুন যে আবেদন তাতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নামে একটি ভুয়া সুপারিশপত্র সংযুক্ত করেন। সেই সুপারিশপত্রে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সই জাল করে একটি সিল ব্যবহার করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কামরুল হাসানের নিয়োগ নবায়নের আবেদন করা হয় ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর। ওই আবেদনে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয় ভারতের উত্তর প্রদেশের ডিমড ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০২ সালে দূরশিক্ষণে এমবিএ পাস।আবেদনের ২৯ দিন পর ৬ ডিসেম্বর আইডিআরএকে পাঠানো একটি চিঠিতে কামরুল হাসানের শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ইবাইস ইউনিভার্সিটির দুটি সনদ দাখিল করা হয় এবং সেগুলো তার আবেদনে যুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়। ইবাইস ইউনিভার্সিটির সনদপত্র অনুসারে কামরুল হাসান খন্দকার বিএসএস পাস করেন ২০১৯ সালে এবং এমবিএ পাস করেন ২০২১ সালে।

পরে কামরুল হাসানের বিদেশি এমবিএ ডিগ্রির মান সমতাকরণ এবং ইবাইস ইউনিভার্সিটির সনদপত্র দুটির বৈধতার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে বলে আইডিআরএ। তবে কামরুল হাসান তার বিদেশি ডিগ্রির মান সমতাকরণ বা ইবাইস ইউনিভার্সিটির সনদপত্র দুটির বৈধতার বিষয়ে কোনো প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি।

পরে শিক্ষাসনদ ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় গত ১৯ মার্চ যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে কামরুল হাসান খন্দকারের নিয়োগ নবায়নের আবেদন নামঞ্জুর করে আইডিআরএ। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে রিভিউ আবেদনও নামঞ্জুর করে আইডিআরএ। ২০২৪ সালের ২ জুন দীর্ঘ শুনানি শেষে কামরুল হাসান খন্দকারের নিয়োগ নবায়নের রিভিউ আবেদন নামঞ্জুর করার সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ।

আইডিআরএ সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানায়, ভারতের ডিমড ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০২ সালে দূরশিক্ষণে এমবিএ পাস দেখান। পরে ইবাইস ইউনিভার্সিটির দুটি সনদ দাখিল করেন। এ সনদপত্র অনুসারে তিনি ২০১৯ সালে বিএসএস এবং ২০২১ সালে এমবিএ পাস করেন। সনদ দুটির বৈধতার বিষয়ে কোনো প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি। এতে তার শিক্ষাসনদ ভুয়া প্রমাণিত হয়।

গত বছরের ১৯ মার্চ নামঞ্জুরের চিঠিতে আইডিআরএ জানায়, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান খন্দকার তার বিদেশি এমবিএ ডিগ্রির মান সংশোধিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা-২০১২ এর (৩)(ক) অনুযায়ী সমতাকরণ করেননি।

এছাড়া পরে দাখিল করা তার ইবাইস ইউনিভার্সিটির দুটি সনদপত্রের বৈধতার বিষয়েও ইউজিসির প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি কামরুল হাসান খন্দকার। এ দুটি কারণে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে কামরুল হাসানের নিয়োগ নবায়নের আবেদন নামঞ্জুর করা হয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করে আইডিআরএ।

এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে আইডিআরএ’র কাছে আরেকটি আবেদন জমা দেন কামরুল হাসান খন্দকার। এ আবেদনে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সই জাল করে একটি সুপারিশপত্র দেওয়া হয়। সেখানে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নামের একটি সিল ব্যবহার করা হয়েছে এবং ইংরেজিতে সই দেওয়া হয়েছে। তবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম ইংরেজিতে সই করেন না, তিনি সই করেন বাংলায়। কামরুল হাসান খন্দকারের সুপারিশপত্রে নাহিদ ইসলামের যে সই ব্যবহার করা হয়েছে সেটি জাল।

এ বিষয়ে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের একান্ত সচিব র হ ম আলাওল কবির বলেন, এ ধরনের কোনো সুপারিশ করেননি। উপদেষ্টাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে তার সই জাল করে এটি করা হয়েছে।

এদিকে, গত ২৪ ডিসেম্বর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর একটি আধাসরকারি পত্র দেন। এতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের ব্যক্তি-স্বার্থ চরিতার্থ করা ও অবৈধ সুবিধা নেওয়ার লক্ষ্যে কিছু অসাধু ব্যক্তি/গোষ্ঠী আমার আত্মীয় পরিচয় বা নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এতে আমার সুনাম বিনষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি আমার সই নকল/জাল করে আমি সুপারিশ করেছি মর্মে অনেকেই বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন দাখিল করছে, যা এরই মধ্যে আমার গোচরীভূত হয়েছে। আমার আত্মীয় পরিচয় বা নাম ব্যবহার করে কেউ কোনো কাজ উদ্ধারের চেষ্টা করলে বা তদবির করলে তা বিবেচনার সুযোগ নেই।

এতে আরও বলা হয়, আপনার প্রতিষ্ঠান ও আওতাধীন দপ্তর/সংস্থায় এ ধরনের কোনো তদবির হলে বা আমার সই নকল/জাল করে কোনো আবেদন দাখিল করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমার একান্ত সচিবকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করছি। আপনার আওতাধীন সব দপ্তর/সংস্থায় আমার বর্তাটি পাঠিয়ে এ ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করছি।
এসব সম্পর্কে জানতে কামরুল হাসান খন্দকারের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি কোনো সাড়া দেননি।