• বুধবার , ২০ নভেম্বর ২০২৪

ম্যানহাটনের জঙ্গি সন্দীপের আকায়েদ


প্রকাশিত: ২:০৭ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ১৭ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৭ বার

 

ম্যানহাটন থেকে ইব্রাহিম খলিল :  ম্যানহাটনের আত্মঘাতি জঙ্গি বাংলাদেশের সন্দীপের আকায়েদ উল্লাহ। আত্মঘাতি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সে গুরুতর আহত হয়েও বেঁচে আছে। akaed ullah-gongi-www.jatirkhantha.com.bdপুলিশ তার জঙ্গি কানেকশন খুঁজছে। যুক্তরাষ্ট্রে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আটক বাংলাদেশি অভিবাসী আকায়েদের পরিবারের সদস্য ও পরিচিতদের খুঁজছে বাংলাদেশ পুলিশ।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন শহরের পোর্ট অথোরিটি বাস টার্মিনালে ‘সন্ত্রাসী আক্রমণের চেষ্টা’র অভিযোগে পুলিশ আকায়েদ উল্লাহকে আটক করে। আটক হওয়ার সময় আহত ওই ব্যক্তিকে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ‘বাংলাদেশি অভিবাসী’ বলে উল্লেখ করেছে।

ম্যানহাটন পুলিশ জাতিরকন্ঠ প্রতিনিধিকে কর্মকর্তারা জানান, বিস্ফোরণের পর শরীরে ‘নিম্ন-প্রযুক্তি’র একটি বোমা বাঁধা অবস্থায় আকায়েদ উল্লাহ নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ।  ওই অঞ্চলের মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের নাদিম বলেছেন, “পুলিশ আকায়েদের পরিবারকে খুঁজছে। কিন্তু যতটুকু জানি, তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।”

পুলিশের মহাপরিদর্শক ঘটনা সম্পর্কে বলেছেন, দেশে আকায়েদ উল্লাহর নামে কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই। সেপ্টেম্বরে তিনি সর্বশেষ বাংলাদেশে আসেন।
নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান বলেন, “আকায়েদ ব্রুকলেন তার মা, বোন ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে থাকত। মঙ্গলবার আহমদ উল্লাহ নামে আকায়েদের একজন আত্মীয়কে খুঁজে পেয়েছে। তিনি বলেছেন, অনেক বছর আগে তার দাদা পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসে।

আকায়েদের বাবা পাঁচ বছর আগে মারা যান এবং আকায়েদ যুক্তরাষ্ট্রে যওয়ার আগে সাধারণ একটি সরকারি স্কুলে লেখাপড়া করেছে।সোমবার ম্যানহাটনে টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে বাস স্টেশনে যাতায়াতের ভূগর্ভস্থ পথে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনজন আহত হন। প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে আহত অবস্থায় বাংলাদেশি নাগরিক আকায়েদ উল্লাহকে আটক করে পুলিশ।
manhaton-www.jatirkhantha.com.bd
ঘটনার পর-

নিউইয়র্কের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কর্মস্থলেই বিস্ফোরকটি তৈরি করেছিলেন আকায়েদ উল্লাহ। প্রাথমিক তদন্তে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আকায়েদ এটি স্বীকার’ও করেছেন। তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ হয়নি। আকায়েদ ইচ্ছে করেই নির্দিষ্ট স্থানে বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছেন। বাস টার্মিনালে হামলার পরপরই পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তের পর তা নাকচ করা হয়।

নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নিলের  জানিয়েছেন, আকায়েদ উল্লাহ যে বিস্ফোরকটি ব্যবহার করেন, সেটি তাঁর শরীরে লাগানো ছিল। তবে বিস্ফোরকে ব্যবহৃত প্রযুক্তি উচ্চমানের ছিল না। তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের তার ও ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সম্প্রতি একটি বৈদ্যুতিক কোম্পানিতে কাজ করছিলেন আকায়েদ।

সেখানে তাঁর ভাইও কাজ করতেন। এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, আকায়েদ ও তাঁর পরিবার যে বাড়িতে থাকেন, ঠিক তার পাশেই থাকেন অ্যালান বুতরিকো। সিএনএনকে তিনি জানিয়েছেন, আকায়েদ থাকতেন ভূগর্ভস্থ কক্ষে। তাঁর বোন থাকতেন দোতলায়। তাঁর ভাইও থাকতেন একই ভবনে। বুতরিকো বলেন, গত দুই রাত ধরে আকায়েদের বাড়ি থেকে মারামারি, চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল।

বুতরিকো বলেন, ‘আমার ভাড়াটেরা জানিয়েছেন, দুই রাত ধরেই এমন চলেছে। তাঁরা বলেছেন যে কান্না ও গোঙানোর শব্দ শুনতে পেয়েছেন। তবে কী হয়েছে বুঝতে পারেননি। পুলিশেও খবর দেওয়া হয়নি।’অ্যালান আরও জানান, বন্ধুসুলভ ছিলেন না আকায়েদ। তিনি বলেন, ‘সে একেবারেই বন্ধুসুলভ ছিল না। তার পরিবার একেবারেই অর্ন্তমুখী স্বভাবের। কারও সঙ্গেই খুব একটা কথা বলত না। তারা কেবল এখানে থাকত, ব্যস এটুকুই।’

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি সূত্রের বরাতে সিএনএন বলছে, গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড এ ধরনের হামলা চালাতে আকায়েদকে বাধ্য করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের ‘অনুপ্রবেশ’ তিনি মেনে নিতে পারেননি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু ব্যাখ্যা করেননি তিনি।অন্যদিকে, জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে আকায়েদের সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, সেই বিষয়টি এখনো স্পষ্ট হয়নি। কিছু সংবাদমাধ্যম এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করেছে। নিউইয়র্কের পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নিল বলেছেন, ‘আকায়েদ বিবৃতি দিয়েছে।’ কিন্তু সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে চাননি তিনি।

আকায়েদ উল্লাহর পড়শীরা জানান, নিউইয়র্ক শহরে ট্যাক্সি ও লিমোজিন গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওই লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল। ২০১৫ সালের মে মাসের পর ওই লাইসেন্স আর নবায়ন করা হয়নি। তবে শহরের ইয়েলো ট্যাক্সি বা উবার চালানোর লাইসেন্স তাঁর ছিল না।গুরুতর আহত আকায়েদ উল্লাহকে এখন বেলেভু হাসপাতালে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিস্ফোরণে তাঁর হাত ও পেটের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। বিস্ফোরণে আরও চার ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তবে তাঁদের অবস্থা গুরুতর নয়।

সোমবারের হামলাস্থল পোর্ট অথোরিটি বাস টার্মিনাল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম বাস টার্মিনাল। প্রতিদিন নিউইয়র্ক থেকে নিউজার্সি পর্যন্ত বিভিন্ন বাস এই টার্মিনাল থেকে যাত্রী পরিবহন করে। এ ছাড়া গ্রেহাউন্ড ও পিটারপ্যানের মতো দূরবর্তী স্থানগুলোয় যাত্রী পরিবহনকারী বাসগুলোও এখান থেকেই ছেড়ে যায়। গড়ে প্রতিদিন এই বাস টার্মিনাল দিয়ে আড়াই লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন।

নিউইয়র্কে চলতি বছরে এটি তৃতীয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। গত মার্চ মাসে মার্কিন সেনাবাহিনীর এক সাবেক সদস্য ছুরিকাঘাতে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে হত্যা করেন। এ ছাড়া গত অক্টোবর মাসে এক উজবেক বংশোদ্ভূত অভিবাসী পথচারীদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দিলে আটজনের মৃত্যু হয়। ওই দুই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখন বিচার চলছে।