• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

মোদির বাড়িতে বাইডেন-মোদী হাসিনা বৈঠক


প্রকাশিত: ৩:১৪ এএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২৩ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪১ বার

সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে

শফিক রহমান : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে জি-২০ সামিটে অংশ নিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন দিল্লিতে। ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে এটি তার শেষ ভারত সফর।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময়ে এই সফরটি করছেন, যখন অবস্থান করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাছাড়া আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার বিরোধি দেশি বিদেশী নানা গোষ্ঠী অপতৎপরতায় লিপ্ত।
সেক্ষেত্রে জি-২০ জোটের সদস্য না হলেও পৃথিবীর শক্তিধর দেশগুলোর এ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে-যেটা বাংলাদেশের জন্য যেমন ফ্যাক্টর তেমনি বিরাট ফ্যাক্টর শেখ হাসিনাকে নিয়েও। কারণ, শেখ হাসিনাকে শক্তিধর হিসেবই কাউন্ট করা হচ্ছে। যেটা ভারত চোখে আঙ্গুল দিয়ে সকলকে দেখিয়ে দিচ্ছে।  

তাই বাংলাদেশ যে জি-২০ জোট থেকে ভালো রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করবে এবং এর ফসল যে বাংলাদেশ ঘরে তুলতে পারবে তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ এবং পর্যবেক্ষন রয়েছে। বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকদিন ধরেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর দৃশ্যমান চাপ প্রয়োগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেরই ধারণা, নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের বিপরীতে ভারতকে সক্রিয় করতে সক্ষম হবেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, জি-২০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশের নেতারা আসবেন, যেখানে ‘বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ভুল বুঝাবুঝি থাকলে সেটিরও অবসান হবে-এমন প্রত্যাশা করছেন অনেকে। আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ বলেছেন, আজকে যার সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি, কে জানে কাল হয়তো তার অবসানও হতে পারে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলছেন, দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুধু বাংলাদেশকেই সামিটে আমন্ত্রণ করা হয়েছে যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই সুযোগে বাংলাদেশ সাইড লাইনে প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে নিজেদের বিষয়ে কথা বলার সুযোগ তৈরি করে নিতে পারবে।
অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে বিশ্ব নেতারা কী ভাবছেন, সেটি যেমন জানার সুযোগ আসবে, তেমনি রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলার সুযোগ হবে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক আলোচনায়।

এদিকে শেখ হাসিনা ও জো বাইডেনের সঙ্গে বাসভবনে বৈঠক নিয়ে শুক্রবার এক বার্তা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। নয়াদিল্লিতে সরকারি বাসভবন ৭ লোককল্যাণ মার্গে তিন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার বিকেলে এই তিন নেতার সঙ্গে বৈঠক নিয়ে নরেন্দ্র মোদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বার্তা দেয়া হয়েছে।সেখানে তিনি লিখেছেন, আজ সন্ধ্যায়, আমি আমার বাসভবনে তিনটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের অপেক্ষায় আছি। এরা হচ্ছেন, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ জগন্নাথ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁদের সঙ্গে মোদির বাসভবনে বৈঠক হবে বলেও জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, এই দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করার এবং উন্নয়নমূলক সহযোগিতাকে আরও জোরদার করার সুযোগ দেবে এই বৈঠকগুলো।

শনিবার সকাল থেকে নয়াদিল্লিতে শুরু হচ্ছে ১৭তম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। জি-২০ গোষ্ঠীর সদস্য না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশকেই ওই সম্মেলনে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক ভারত। জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মেলন শুরুর একদিন আগে ভারত পৌঁছে শুক্রবার বিকেলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সম্পর্কে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আন্তরিকতার বার্তা দিতেই এই গৃহঅভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে আন্তরিকতার বার্তা দিতে ভিন্ন আয়োজনে

 মোদি শেখ হাসিনাকে রেখেছেন। এটাই হচ্ছে আসল আন্তরিকতার বার্তা এবং ভিন্ন আয়োজন একটা বিশেষ ইঙ্গিত।২০ দেশের জোট জি-২০ গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ বেশ কয়েকজন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান দিল্লিতে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশসহ ৯টি দেশকে এই শীর্ষ সম্মেলনে ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে- যার মধ্যে একটি করা হচ্ছে রুপি ও টাকায় বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার পারস্পারিক লেনদেন সহজ করার জন্য।পাশাপাশি কিছু জরুরি নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে ভারত যেন বাংলাদেশের জন্য একটি কোটা সংরক্ষণ করে, এমন প্রস্তাবও মি. মোদীর সাথে আলোচনায় তুলে ধরবেন শেখ হাসিনা।

এটি হলে ভারত কোন পণ্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাংলাদেশে সেটি আমদানি বন্ধ হবে না।বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এর মধ্যেই নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিসহ কিছু সিদ্ধান্তে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ক্ষমতাসীন মহলে।কিন্তু শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ভারতের বর্তমান সরকারকে এসব বিষয়ে এখনো সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। যদিও আগের দুটি নির্বাচন, বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা ছিলো অনেকটা প্রত্যাশিত।রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা অনেকেই মনে করেন, শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসনের পেছনে ভারত সরকারের সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এখন নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকী। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ইস্যুটি দিল্লি সফরে আলোচনায় উঠে আসবে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, জি-২০ সামিট এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা’র কথাই তুলে ধরবে।বাংলাদেশ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়। ইন্দো প্যাসিফিকে কোনো প্রক্সি ওয়ার আমরা দেখতে চাই না। পাশাপাশি ভারতের সাথে তিস্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ যতগুলো দ্বিপাক্ষিক ইস্যু আছে সবই আমরা তুলে ধরবো,বলেন তিনি।

নির্বাচন নিয়ে অন্যদের চাপকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে আমরা ভালো কাজ করেছি। জনগণ পছন্দ করলে ভোট দিবে। আমরা চাই ফ্রি, ফেয়ার ও স্বচ্ছ নির্বাচন। কোন ধরণের কারচুপি চাই না। আমরা সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন চাই। সেখানে কেউ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলে স্বাগত জানাবো। কিন্তু কেউ যদি মাতব্বরির ভূমিকা চান, সেটা হবে না। শেখ হাসিনা কাউকে ভয় পায় না।