মে্ট্টোরেলে বদলে যাবে ঢাকা-২৬ জুন নতুন ঢাকার উদ্বোধন
বিশেষ প্রতিনিধি : মে্ট্টোরেলে বদলে যাবে ঢাকা ।২৬ জুন নতুন ঢাকার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল ও বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রাজধানীর পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামোতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
রাজধানীর যানজট নিরসনে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) অংশ হিসেবে পাঁচটি রুটে নির্মাণ করা হচ্ছে মেট্রোরেল। এর মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট-এমআরটি-৬ রুটের নির্মাণ কাজ আগামী ২৬ জুন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজধানীতে মেট্রোরেলের বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ চলছে অনেক দিন থেকে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই কাজে গতি ফিরে আসবে। পাশাপাশি অন্য চারটি রুটের প্রাথমিক কাজও শুরু হচ্ছে। সব মিলিয়ে মেট্রোরেল নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক সূচনা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে।
ওবায়দুল কাদের জানান, মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে বাস্তবায়ন। ইতিমধ্যে ডিপো উন্নয়নের কাজও শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল-৬ প্রকল্পটি উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) সহায়তা দিচ্ছে ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
বাকি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। ২০২০ সালের মধ্যেই মতিঝিল পর্যন্ত এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। আর ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেল বাণিজ্যিক চলাচল শুরু করবে। স্টেশন থাকবে ১৬টি। আর প্রতি ঘণ্টায় উভয় দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে এ রুটে।
জানা গেছে, রাজধানীতে পর্যায়ক্রমে মেট্রোরেলের আরও চারটি রুট নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে দুটি রুট নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এর একটি হচ্ছে এমআরটি রুট-১। গাজীপুর থেকে ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত এটির দৈর্ঘ্য হবে ৪২ কিলোমিটার। প্রথম পর্যায়ে এ রুটের কাজ হবে এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর এবং খিলক্ষেত থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার হবে মাটির নিচে (আন্ডারগ্রাউন্ড)।
জানা গেছে, এমআরটি-১ এর পাশাপাশি মহানগরীর পূর্ব-পশ্চিমে সংযোগ বাড়াতে চূড়ান্ত করা হয়েছে মেট্রোরেল-৫ এর রুটও। এটি নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে গাবতলী পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাটারা থেকে গাবতলী-হেমায়েতপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার কাজ করা হবে। এর মধ্যে ৬ কিলোমিটার হবে মাটির নিচে।
ইতিমধ্যে জাইকা এমআরটি রুট-১ ও রুট-৫ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে। এদিকে এমআরটি-৬ এর মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণের জন্য ২৭ মার্চ একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাজধানীর উত্তরা তৃতীয় পর্বে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়েছে জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে। ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণে ব্যয় হবে ৫৬৭ কোটি টাকা।
অর্থায়নকারী সংস্থা জাইকার সম্মতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নকাল এগিয়ে আনা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৯ সালে মেট্রোরেল রুট-৬ এর বাণিজ্যিক পরিচালনা সম্ভব হবে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ভবন, টিএসসি, জাতীয় জাদুঘরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পাশ দিয়ে রুট নির্মাণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির শব্দ নিরোধক যন্ত্র স্থাপন করা হবে।
বাস র্যাপিড ট্রানজিট : মেট্রোরেলের পাশাপাশি ২৬ জুন গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ২০ কিলোমিটার বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। টঙ্গী ও উত্তরার সঙ্গে ঢাকা মহানগরীর যাতায়াত সহজতর করতে বিআরটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর ফলে অধিক যাত্রী দ্রুত পারাপার হতে পারবেন। সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও আরামদায়ক সেবা নিশ্চিত করে রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করাও অনেকাংশে সহজ হবে। বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার যাত্রী পারাপার সম্ভব হবে। তিন মিনিট পরপর স্টেশন থেকে বাস ছাড়বে।
বিআরটি টার্মিনাল থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণ কাজের পাশাপাশি বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারণের প্রাথমিক কাজও চলবে। বিআরটিএ রুট হবে গাজীপুর টার্মিনাল থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত। থাকবে ২৫টি স্টেশন। উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলিভেটেড বিআরটি লেন থাকবে। ১৬ কিলোমিটার থাকবে সমতল। এ প্রকল্পের আওতায় ছয়টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে এই রুটে।
বাস ভাড়া আদায়ে থাকবে ইলেকট্রনিক স্মার্টকার্ড। বিআরটি প্রকল্পে দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হচ্ছে এক হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। সরকারের পাশাপাশি এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি ফান্ড। ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাস্তবায়ন কাজও শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিআরটি চালু হবে।