• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

মেধা বাড়াতে শিশুদের দুধ খাওয়াচ্ছে সরকার


প্রকাশিত: ৮:২৬ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২৩ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৯ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : মেধা বাড়াতে শিশুদের দুধ খাওয়ানো শুরু করল সরকার। আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁওস্থ ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্কুল মিল্ক কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। দুধ উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং বাজারজাতকরণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প হাতে নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। শারীরিক ও মানসিক বিকাশে দুধের গুরুত্ব বিবেচনা করে লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (এলডিডিপি) নেয়া হয়।

এর অন্যতম উদ্দেশ্য দুধের বাজারজাতকরণ এবং দুধ পানের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো।উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষের দুধ পানের পরিমাণ অনেক কম। উন্নত বিশ্বে মাথাপিছু দৈনিক দুধ পানের পরিমাণ গড়ে এক লিটারের কাছাকাছি হলেও বাংলাদেশে তা মাত্র ১৭৬ মিলিলিটার।শিশুদের অপুষ্টির কথা বিবেচনা করে দেশের ৬১ জেলার ৩০০ উপজেলার তিন শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বছরব্যাপী দুধ খাওয়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) আওতায় এসব বিদ্যালয়ের শিশুদের প্রতিদিন বিনামূল্যে ২০০ মিলিলিটার করে দুধ খাওয়ানো হবে। একদিকে পুষ্টি চাহিদাপূরণ অন্যদিকে পুষ্টিবিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাইলট প্রকল্পটি সফল হলে দেশের সব স্কুল ও শিশুকে এমন কর্মসূচির আওতায় আনা সম্ভব হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিরাপদ এবং পুষ্টিকর দুগ্ধজাত পণ্য বিশেষ করে তরল দুধ স্কুলশিক্ষার্থীদের পান করাতে কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। স্কুল মিল্ক ফিডিং প্রোগ্রাম- এসএমএফডি নামের পাইলট প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে এরই মধ্যে গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এই গাইডলাইনে স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে দুধ বিতরণে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের ভূমিকা, দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণনা করা হয়েছে।বিশেষ করে স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা, শিক্ষার্থীদের মাতা-পিতা ও অভিভাবকদের দায়িত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি দুগ্ধজাত পণ্য সরবরাহকারীসহ উপজেলা পর্যায়ে স্কুল মিল্ক ফিডিং কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটি এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে স্কুল মিল্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির দায়িত্বও বর্ণনা করা হয়েছে এ গাইডলাইনে।

এ বিষয়ে এলডিডিপি প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. গোলাম রব্বানী গণমাধ্যমকে জানান, উদ্বোধনের পরেই অর্থাৎ মার্চ মাসের মধ্যে ৫০টি স্কুল, জুনের মধ্যে ১০০টি এবং ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো ৩০০ স্কুলে চালু করা হবে এ কার্যক্রম। তবে দেশের দুধ বিপননকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে এ কাজটি করতে হচ্ছে। এ কারণে একটু সময় লাগছে। আর স্কুলগুলো নির্ধারণ করে দিচ্ছে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়।তিনি আরও বলেন, গরুর দুধ আদর্শ পুষ্টিকর খাবার। তাই শিশুদের দুধ খাওয়া প্রতি আগ্রহ ও আকৃষ্ট করার পাশাপাশি নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে স্কুল মিল্ক ফিডিং শুরু হচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তেজগাঁওয়ে ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই ৫০টি বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১ হাজার ৬৪২ জন। যেসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের দুধ পান করানো হবে সেখানে সব শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করতে একটি আইডি কার্ড দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি স্কুলেই শিক্ষক এবং অভিভাবকদের পরিবেশ ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এরপর মূল্যায়ন করা হবে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে প্রভাব কী হলো? শিশুদের উচ্চতা, ওজন কতটুকু বাড়লো? এছাড়া তার মেধা কতটুকু বাড়লো তা দেখা হবে। সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোতে বছরে ১৬০ দিন চলবে এই কার্যক্রম। স্কুলের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী প্রতিদিন দুধ পাবে।

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, সবার জন্য নিরাপদ ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। বর্তমান সরকার চায় আগামী প্রজন্ম মেধাবী হিসেবে গড়ে উঠুক। তাই স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে পুষ্টিসমৃদ্ধ ও আদর্শ খাবার হিসেবে দুধ বিতরণ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আন্তঃ মন্ত্রণালয় স্কুল মিল্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটি কাজ করবে। স্কুল মিল্ক ফিডিং কর্মসূচি বাস্তবায়নের সার্বিক অগ্রগতি সভায় পর্যালোচনা করবে এই কমিটি। কর্মসূচি বাস্তবায়নে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, তিন মাসে একবার সভা আহ্বান, জরুরি প্রয়োজনে যে কোনো সময়ে সভা আহ্বান করতে পারবে কমিটি। পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে কর্মসূচি পরিচালনার স্বার্থে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/বিশেষজ্ঞকে সংযুক্ত করতে পারবে।

এছাড়াও স্কুল মিল্ক ফিডিং কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি দুধের সরবরাহ নিয়মিত আছে কি না বা সরবরাহ বন্ধ আছে কি না তা পরিবীক্ষণ করবে। গাইডলাইন অনুযায়ী দুধ বিতরণ করছে কি না তা পরিবীক্ষণ, স্কুলে দুধের প্যাকেটের অপব্যবহার- তছরুপ হচ্ছে কি না সেটা নজরদারি করবে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল মিল্ক সম্পর্কিত অভিযোগ জিআরএম পদ্ধতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করবে কমিটি।