• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ-ছয় দফা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত: ১০:৪২ পিএম, ৭ জুন ২৪ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৭ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান বলেন, সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। বিশেষ করে খাদ্য মূল্য, সেখানে উৎপাদন এবং সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। বৃষ্টির কারণে যেমন আলুর বীজ নষ্ট হয়ে গেছে, তো এই রকম অনেক কিছুই আছে। আমরা এখনো উৎপাদনমুখী হলে খাদ্যে কোনো দিন অভাব হবে না। বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে।

গতকাল তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বাজেটে এবার মৌলিক চাহিদাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গতকাল বাজেট দিয়েছি, বিএনপি’র আমলে সবশেষ বাজেট মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার ছিল। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকার, সেখানে আমরা ৭ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা বাজেট প্রস্তাব করেছি। এই বাজেটে মানুষের মৌলিক যে অধিকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, দেশীয় শিল্প এবং সামাজিক নিরাপত্তা, এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যা মানুষের জীবনকে উন্নত করবে, নিশ্চয়তা দেবে।

তার কারণ হচ্ছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কোভিড-১৯ এর অতিমারি দেখা দিয়েছিল, এই অতিমারির ফলে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছে, আমরাও সেই মন্দায় পড়ে গেলাম। সারা বিশ্বে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। এরপর আসলো ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, এরপর স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন, ফলে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার প্রধান বলেন, আমাদের মানুষকে খাওয়াতে হবে আগে। রিজার্ভ কতো আছে না আছে, সেটার চেয়ে বেশি দরকার আমার দেশের মানুষের চাহিদাটা পূরণ করা।

সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পানির মতো টাকা খরচ করেছি। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেটা কোনো উন্নত দেশ করেনি, বিনা পয়সায় কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন দিয়েছি, বিনা পয়সায় টেস্ট করিয়েছি। সেটা করেছি কেন? মানুষকে বাঁচাতে। চিকিৎসা বিনা পয়সায়, যে ডাক্তার চিকিৎসা করেছে তাদের প্রতিদিন আলাদা ভাতা দিতে হতো, এভাবে পানির মতো টাকা খরচ হয়েছে। তারপর যখন দাম বেড়েছে তখন ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলার করেও আমি কিনে নিয়ে এসেছি। ঠিক সেইভাবে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে, উন্নত দেশগুলোও এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।

মানুষের চাহিদা পূরণের ভাবনা থেকেই এই বাজেট দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে বসে বসে হিসাব কষে, আগে এত পার্সেন্ট বেড়েছে এবার কম পার্সেন্ট বাড়লো কেন? এখন সীমিতভাবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। যাতে আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট না হয়। মানুষের যে চাহিদা সেটা যেন পূরণ করতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বাজেট করেছি। তিনি বলেন, পারিবারিক কার্ড আমরা দিচ্ছি, কারণ এখন মূল্যস্ফীতি বেশি। সব থেকে অবাক কাণ্ড আমাদের উৎপাদন বেড়েছে, চাল উৎপাদনই আমরা চারগুণ বাড়িয়েছি।

প্রত্যেকটা জিনিসের উৎপাদন বাড়িয়েছি। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে, মানুষের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। এখন আর দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হয় না। কম পক্ষে দুই বেলা খাবার তো পাচ্ছে মানুষ। শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আমরা পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। যারা একেবারে হতদরিদ্র তাদের তো একেবারে বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি। আর সামাজিক নিরাপত্তা তো বিনা পয়সায় দিয়ে যাচ্ছি। কালোটাকা সাদা করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা প্রশ্ন আসছে, কালোটাকা নিয়ে।

কালোটাকা নিয়ে আমি শুনি, কালোটাকা সাদা করলে আর কেউ ট্যাক্স দেবে না। ঘটনা কিন্তু এটা না, এটা শুধু কালোটাকা নয়। জিনিসের দাম বেড়েছে, এখন এক কাঠা জমি যার আছে সেই কোটিপতি। কিন্তু সরকারি যে হিসাব, সেই হিসাবে কেউ জমি বিক্রি করে না। বেশি দামে বিক্রি করে, এতে কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এই টাকাটা তারা নিজেদের কাছেই রাখে।

এবার আমরা চেয়েছি এমন ব্যবস্থা করতে যাতে করে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তারা যেন সেটা আসল পথে নিয়ে আসে। তিনি বলেন, আমি বলি মাছ ধরতে গেলে তো আধার দিতে হয়, দিতে হয় না? আধার ছাড়া তো মাছ আসবে না। সেই রকম একটা ব্যবস্থা, এমনটা আগেও হয়েছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক আমলেই শুরু হয়েছিল, আর পরেও প্রত্যেক সরকারই করেছে। সেই সুযোগটা আমরাও দিয়েছি। এটা নিয়ে নানা জনে নানা কথা বলছে। তারপরেও মানুষের প্রয়োজনীয় যেসব পণ্য সে সবের ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখেই আমাদের পরিকল্পনা করে চলতে হবে। কিছু ভালো লাগে না যেই গ্রুপ আছে তাদের ভালো না লাগাই থাক, ওগুলোতে কান দেয়ার দরকার নাই। এটা নতুন না। যখন অস্বাভাবিক সরকার আসে, তারা খুব খুশি হয়। মার্শাল ল’ এলে খুশি ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে খুশি ছিল।

তাতে তাদের নাকি গুরুত্ব থাকে। আর জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তাদের নাকি মূল্যায়ন হয় না। মূল্যায়ন করবো কীভাবে, দাঁড়িপাল্লায় দাঁড় করিয়ে মাপবো নাকি? কেয়ারটেকারের সময় দেখেছি তাদের চরিত্র, কীভাবে তেল মারে অগণতান্ত্রিক সরকারকে। আমাদের ওই তেল মারা গোষ্ঠীর দরকার নেই।’

নামিদামি অনেক নেতা থাকলেও পাকিস্তানের বঞ্চনা, বৈষম্যের প্রতিবাদ একমাত্র বঙ্গবন্ধুই করেছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পূর্ববাংলার টাকা দিয়ে চলতো পশ্চিম পাকিস্তান। তারপরও শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বাঙালিরা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এদেশের উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করেছি বলেই দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব দরবারে একটি রোল মডেল হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে।

বিএনপি, এরশাদের শাসনামলে দেশের কোনো উন্নতি হয়নি বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়ার আমলে দেশের কোনো উন্নতি হয়নি। বরং দুর্নীতি, অর্থপাচার হয়েছে। তারা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ২৯ বছর দেশের কোনো উন্নয়নই করতে পারেনি।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন। সভায় অংশ নেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম।